লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী কুদ্দুস বয়াতি। লোকজ গান, বিজ্ঞাপন আর মিউজিক ভিডিওর গায়ক হয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। লোকজ গানকে সংরক্ষণের জন্য নিজ উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন এ নিবেদিতপ্রাণ বয়াতি। এ লোকশিল্পীর বিভিন্ন উদ্যোগ ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে আজকের আলাপনে- পান্থ আফজাল
কেমন আছেন? নতুন বছরে প্রত্যাশা কী?
আল্লাহ অনেক ভালো রাখছে, আলহামদুলিল্লাহ! নতুন বছরে দেশ ভালো থাকুক, মানুষ ভালো থাকুক।
‘এক টাকার কুদ্দুস বয়াতি’ কথাটির রহস্য কী?
আমি এক টাকার কুদ্দুস বয়াতি। আমি জীবনে প্রথম পালাগান গেয়ে ১ টাকা পাই। সেটা ৫০ বছর আগেকার কথা। আমাদের গ্রামের আবদুল বারিক আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি আমার গানে মুগ্ধ হয়ে সেই সময় ১ টাকা দিয়েছিলেন। আমি যেন কোনো চিন্তা ছাড়া গান চালিয়ে যেতে পারি সেজন্য তিনি ৩০ শতাংশ জায়গা দিয়েছিলেন কম টাকায়।
আপনার প্রতিষ্ঠিত ‘কুদ্দ্সু বয়াতি ফাউন্ডেশন’, ‘লোকজ ইনস্টিটিউট’ আর ‘লোকজ স্মৃতি জাদুঘর’ সম্পর্কে জানতে চাই।
লোকজ গান তো আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির একটা অংশ। এসব গান যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমি ‘কুদ্দুস বয়াতি ফাউন্ডেশন’ করেছি। পালাগানসহ বিভিন্ন লোকজ গানের চর্চা এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি। কুদ্দুস বয়াতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে লোকজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সঙ্গে আরও থাকবে ‘লোকজ স্মৃতি জাদুঘর’। সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ সাহায্য বা পরামর্শ দিলে কাজটি করতে সুবিধা হবে।
এসব উদ্যোগের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী?
আমার সোনার বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লোকজ সংস্কৃতি। এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে স্টেজশো করতে গেলে দেখি তারা ২০০-৫০০ বছরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাদেরও লোকজ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই দরকার। তাই আমার ইচ্ছা নতুন প্রজন্মকে লোকজ গানে শিক্ষিত করা। বাংলার বিভিন্ন প্রখ্যাত গুণীজনের স্মৃতি সংরক্ষণ করছি। সে জন্য ২০১১ সালে ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন করেছি। ভবনটির ৪তলা ফাউন্ডেশন দিয়েছি। সারা বছরের সম্বল ৭০ লাখ টাকা দিয়ে এ কাজ শুরু করেছিলাম। এখন একটু একটু করে এগোচ্ছে। তাই সবার সহযোগিতা চাই। কেউ অনুদান দিলে তার নামও কষ্টি পাথরে লেখা থাকবে।
হুমায়ূন আহমেদ আপনাকে খুব ভালোবাসতেন...
অনেক মনে পড়ে স্যারকে। তাঁর জন্যই আমারে সবাই আজ চিনেছে। তিনি গ্রাম থেকে আমারে তুলে এনেছেন। হুমায়ূন স্যারের কল্যাণে প্রথমবারের মতো একটা বিজ্ঞাপনে গান গাই- ‘এই দিন, দিন না আরও দিন আছে’ শিরোনামে। তারপর থেকেই আমার কষ্ট শেষ হইছে। দেশ-বিদেশে গান করি, কত নাম-সুনাম। সবই স্যারের উসিলায়।
মাঝখানে অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। কারণটা কী?
কষ্ট থেকে। এদেশের একজন শিল্পী হাজার হাজার মানুষকে আনন্দ দেয়; কিন্তু একজন শিল্পী কীভাবে আছেন, কীভাবে তার সংসার চলে-এগুলো দেখার কোনো লোক নেই। দেশের মানুষ শুধু বিনোদন নিতে চায় কিন্তু শিল্পীদের খোঁজ নিতে রাজি নয়।
দেশের বাইরে কতগুলো স্টেজশোতে অংশগ্রহণ করেছেন?
প্রায় অর্ধশত দেশে স্টেজ শোতে গান পরিবেশন করেছি। আরও রয়েছে সামনে।
‘আসো মামা হে’ গানটি সবার মুখে মুখে ছিল...
মিলু ভাইয়ের ছেলে প্রীতম আমারে বলল, একটি নতুন গানের মাধ্যমে তোমাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাতে চাই। প্রথমবার শুনেই গানটা করতে রাজি হই। এরপর তো দেখলেনই।
অনেকেই আপনার নাম বিক্রি করে...
অনেকেই আমার কাছে আসে, আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকে। ৪-৫ দিন আমার সঙ্গে থাকার পর তারা চলে যায়। আমার নাম বলে ধান্দাবাজি, প্রতারণা করে। আমি বলি, যারা আমার নাম বিক্রি করে চলে তারা আমার সন্তান নয়, শিষ্য নয়। আমার সন্তান পাঁচজন ছাড়া আর কেউ না।