নব্বই দশকের শেষ ভাগ থেকে বড় পর্দার নায়িকারা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ছোট পর্দার নাটকের দিকে ঝুঁকছেন। অথচ এর আগে তারকাদের মনোভাব ছিল এমন- চিত্রনায়িকারা বড় পর্দাতেই নিজেদের আবদ্ধ রাখবেন। তারা যদি টিভি নাটকে নিজেদের চেহারা দেখান তাহলে তাদের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে। দর্শক গাঁটের পয়সা খরচ করে বড় পর্দায় তাদের দেখতে যাবে না। কারণ চলচ্চিত্র তারকা মানে দূর আকাশের তারা, যাকে ধরাছোঁয়া যায় না। নব্বই দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পীরা এটাই মনে করতেন। দর্শকও তাই চাইতেন। ওই সময় পর্যন্ত কোনো চিত্রনায়িকাকে ছোট পর্দায় দেখা যেত না। কিন্তু নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে এ চিত্র পাল্টাতে থাকে। চলচ্চিত্রের নায়িকারা ছোট পর্দার নাটকে ব্যস্ত হতে শুরু করেন। এ কাতারে শামিল হন সুজাতা, চম্পা, দিতি, মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা, নিপুণসহ অনেকে। এই তালিকা এখন দীর্ঘ হচ্ছে। চিত্রনায়িকা রেসি এবং সাহারা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন অচিরেই তারা টিভি নাটকে আসছেন। ছোট পর্দায় আগমন প্রসঙ্গে সুজাতা ও চম্পা বলেন, ষাট, সত্তর ও আশির দশকের মতো চলচ্চিত্রের সুদিন এখন আর নেই। বিশেষ করে নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে দর্শক যখন চলচ্চিত্রবিমুখ হয় তখন চিত্রশিল্পীরা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতেই ছোট পর্দার নাটককে বেছে নেন। আমরাও তাই করছি। দর্শক এখন বড় পর্দার পরিবর্তে ছোট পর্দাতেই ঝুঁকেছে বেশি। ফলে দর্শকের কথা ভেবেই বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায় কাজ করে এখন আনন্দ পাচ্ছি।
মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, এখন আর বড় ও ছোট পর্দার মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের সব দেশেই একই চিত্র। তারপরও বলব নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে চলচ্চিত্র যখন স্থবির অবস্থায় পড়ে তখন অনেকেই বাধ্য হয়ে ছোট পর্দার নাটককেই বেছে নেন। তারপরও বলব আমরা বড় বা ছোট পর্দার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। দুটোই দর্শকের মাধ্যম। চলচ্চিত্রের মতো নাটকের শিল্পীরাও সমান জনপ্রিয়। তাই দর্শকের কথা ভেবেই দুই মাধ্যমেই কাজ করছি।
নিপুণ বলেন, বড় পর্দার শিল্পীরা ছোট পর্দায় কাজ করলে তাদের জনপ্রিয়তা কমে যায় এ ধারণা এখন অচল। সব দেশেই তারকারা উভয় মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ চলচ্চিত্র ও নাটক এখন সমান জনপ্রিয়। তা ছাড়া নব্বই দর্শকের পর থেকে এদেশে চলচ্চিত্রের চেয়ে নাটকের দর্শক বেড়েছে। তাই উভয় মাধ্যমে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্র থেকে নির্বাসিত দুই নায়িকা রেসি ও সাহারা টিভি নাটকে অভিনয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের কথায় কাজের মধ্যে শিল্পী বেঁচে থাকবে এটাই বড় কথা, ছোট বা বড় পর্দা বলে কোনো কথা নেই। দর্শকের ভালোবাসায় শিল্পী তৈরি হয়। তাই দর্শককে আনন্দ দিতেই শিল্পীদের কাজ করে যেতে হবে। তবে তা কোন মাধ্যমে এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।
এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বোদ্ধাদের মন্তব্য হচ্ছে, এখন বিশ্বায়নের যুগ। পৃথিবীর কোনো সেক্টরই এক জায়গায় আবদ্ধ নেই। তাই শিল্পীরা কেন নিজেদের একটি গণ্ডিতে বন্দী রাখবে। যদিও একটি সময় মনে করা হতো বড় পর্দার শিল্পীরা ছোট পর্দায় কাজ করলে তাদের জনপ্রিয়তা কমে যায় এ ধারণা এখন অচল। পাশের দেশ ভারতে বিগ বি অমিতাভ বচ্চন নব্বইর দশক পর্যন্ত ছোট পর্দার ধারেকাছে ঘেঁষতেন না। তারও একই ধারণা ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের শেষ দিকে এসে ছোট পর্দার বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন তিনি। এতে তার জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং বেড়েছে। তার পাশাপাশি সালমান, শাহরুখসহ বড়মাপের শিল্পীরাও ছোট পর্দায় কাজ করছেন এবং বড় পর্দায় জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের শিল্পীদের কাজ করতে বাধা কোথায়।