চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কথায় দেশীয় চলচ্চিত্রের আমূল পরিবর্তন এসেছে আপনার হাত ধরেই, কিভাবে তা সম্ভব হলো?
প্রথমেই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নির্মাণের উপর জোর দিয়েছি। এ জন্য দেশের সেরা টেকনিশিয়ানদের পাশাপাশি বিশ্বসেরা অর্থাৎ হলিউড এবং বলিউডের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত টেকনিশিয়ানদের নিয়ে কাজ করছি। এদের মধ্যে মুম্বাইয়ের ক্যামেরাম্যান ডিওপি নাগরাজ, টাইগু, ড্যান্স ডিরেক্টর মি. ভিজে, হলিউডের ফাইট ডিরেক্টর মি. পান (হ্যাং ওভার টু মুভি খ্যাত) এবং ক্লাইভ কার্টিস (জেমস বন্ড খ্যাত) উল্লেখযোগ্য। চিত্রায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা লোকেশন ব্যবহার করছি। গানের ক্ষেত্রেও দেশীয় প্রখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি মুম্বাইয়ের খ্যাতনামা সংগীতকারদের নিয়ে কাজ করছি। হলিউড-বলিউডের প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করাচ্ছি। এক কথায় গান, গল্প থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল সাপোর্টের ক্ষেত্রে বিশ্বমানকে বজায় রেখে এগুচ্ছি। আমাদের চলচ্চিত্রকে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ফলে দর্শক আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্রের স্বাদ নিতে ব্যাপক হারে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরেছে।
প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য এনেছেন, এ বিষয়ে বলুন।
আসলে 'প্রচারে পণ্যের প্রসার' একথা মানতেই হবে। এ বিষয়টির প্রতি জোর দিয়েছি বলে বিলবোর্ড, পত্রিকা ও টিভিতে চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন প্রচার চালু করেছি। আগে কোনো সেলিব্রেটি নিজের ছবি নিয়ে ছোট পর্দায় ইন্টারভিউ দিত না। এই রীতি চালু করে সফল হয়েছি। পোস্টার-ডিজাইনের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য এনেছি। ঢাকা এবং দূর-দূরান্তের প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলা-কুশলীসহ সবাই দর্শকের সঙ্গে বসে ছবি দেখছি। এতে দর্শক আগ্রহ বাড়ছে। এভাবে সমৃদ্ধ নির্মাণ এবং প্রচারের ফলে আমার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্র দর্শকের মনের মণিকোঠায় ঠাঁই পাচ্ছে।
প্রদর্শক ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের কথায় প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ দর্শকদের আপনি প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়েছেন, এটি কিভাবে সম্ভব হয়েছে?
দেখুন এখন বিশ্বায়নের যুগ। বর্তমান সময়ের দর্শকরা ঘরে বসে বিশ্বের উন্নত সব চলচ্চিত্র দেখতে পারছে। তাই টেকনিক্যাল বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে তাদের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এখন প্রতি ঘরে ছেলেমেয়েরা ছোটবেলা থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত কাজের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। তারা বিশ্বমানের সেরা কাজ চায়। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছি বলেই যারা সিনেপ্লেঙ্ কিংবা ব্লক বাস্টারে হলিউডের ছবি কিংবা ঘরে বসে ছোট পর্দায় বলিউডের ছবি দেখত তারা এখন আমার ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ফিরেছে। এর মাধ্যমে আবার প্রমাণ হয়েছে এ দেশের দর্শক ভালো কিছু চায় এবং পেলেই তা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করে।
আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণে বিশাল বাজেট থাকে। এ দেশে বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা খুবই কম, তাই এতে অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়টি থেকেই যায়। তারপরও কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন?
দেখুন প্রথমত, আমি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি দেশি ও বিদেশি উভয় বাজারের জন্য। তাই আর্থিক ঝুঁকির বিষয়টি আর থাকে না।
দ্বিতীয়ত, আমি জানি গল্প, নির্মাণ, গানসহ সব ক্ষেত্রে গতানুগতিকতা পরিহার করলে দর্শক ছবি দেখবেই। এক্ষেত্রেও আমি সফল হয়েছি। ফলে আমার ছবির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আর্থিক ঝুঁকি থাকে না এবং স্বাচ্ছন্দ্যে এগুতে পারছি।
'মোস্ট ওয়েলকাম টু'তে দর্শক নতুন কি স্বাদ পাবে?
এ ছবির গল্প সম্পূর্ণ নতুনত্বে মোড়া। বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশে যে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে পারে তা এ ছবির গল্পে দেখানো হচ্ছে। ফলে গল্পের ভিন্নতার কারণে সবাই সমৃদ্ধির নতুন পথ খুঁজে পাবে।
এ ছাড়া যেখানে এদেশে এক মাসের মধ্যে একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ শেষ হয় সেখানে এ চলচ্চিত্রের একটি অ্যাকশন দৃশ্য ধারণ করতে ৬০ দিন সময় লেগেছে। মানে সুনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কার্পণ্য বা আপোস করিনি। আমার কথা হচ্ছে যতই কষ্ট আর ব্যয় হোক, দর্শককে ভালো মানের জিনিস দিয়েই যাব। কারণ আমাদের চলচ্চিত্রকে উচ্চ মানে নিতেই হবে। তাই আমার বিশ্বাস, 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' দর্শক একাধিকবার দেখবে।
* আলাউদ্দীন মাজিদ