যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' সুপার ডুপার ব্যবসা করায় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে এখন এ জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ বাড়ছে। তাদের কথায়, কয়েক দশক ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রের অবস্থা শোচনীয়। মাঝে-মধ্যে দু'একটি চলচ্চিত্র ব্যবসা করলেও সেই সফলতার ধারা অব্যাহত থাকছে না। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। নব্বই দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২০০। এই সংখ্যা কমে এখন সাড়ে চারশ'র ঘরে এসে ঠেকেছে। প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেনই, এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেকার হয়ে বেশির ভাগ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলীদেরও একই অবস্থা। কাজের অভাবে অনেকেই উপোস করছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টির মতো ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসা করেছে মাত্র দুটি ছবি। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের ছবিই এখন আর চলছে না। এ বছর এই নায়কের পরপর তিনটি ছবি 'রাজত্ব', 'ডেয়ারিং লাভার' এবং 'ভালোবাসা এক্সপ্রেস' ব্যবসায়িক দিক থেকে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মিত হলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই বেঁচে যাবে। কারণ যৌথ আয়োজনের ছবির মান উন্নত বলে এর প্রতি স্বাভাবিকভাবেই দর্শক আগ্রহ দেখা দেয়। এ ছাড়া যৌথ প্রযোজনা নতুন কিছু নয়। স্বাধীন দেশে এ পর্যন্ত অর্ধশতেরও বেশি এ জাতীয় ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শুধু ভারত নয়, প্রতিবেশী অনেক দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং হতে পারে। বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার ব্যাপারে যে আপত্তি উঠেছে তা হচ্ছে শিল্পী থেকে শুরু করে সব কিছুতে সমান হারে দুদেশের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, ১৯৮৬ সালের এই নীতিমালা ২০১২ সালে বাতিল করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় উল্লেখ আছে, দুদেশের নির্মাতা আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। সুদীপ্ত দাশ বলেন, যদি মনে হয় এই নীতিমালার কারণে কোনো পক্ষের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে নতুন করে আবার নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ২০১২ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রদর্শন শুরু হলে দর্শক আবার আগ্রহ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে থাকে। কিন্তু এই প্রযুক্তিতে নির্মাণ ব্যয় কমে আসার সুযোগে কতিপয় অসাধু নির্মাতা চলচ্চিত্রের নামে টেলিফিল্ম নির্মাণ করে দর্শকদের আবার প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ করেছে। তাই শত চেষ্টা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের সুদিন স্থায়ী হচ্ছে না। এ অবস্থায় ১৬ মে ঢাকা ও কলকাতার যৌথ প্রযোজনায় অনন্য মামুন ও অশোকপতি নির্মিত 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' চলচ্চিত্রটি ঢাকার একটিসহ দেশের ৬৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে সব শ্রেণীর দর্শক প্রবল আগ্রহ নিয়ে ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসে। যশোরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহে প্রথমদিনের আয়ে রেকর্ড গড়ে। এ দিন টিকিট বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার টাকার। অন্য প্রেক্ষাগৃহগুলোরও একই চিত্র। দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার বলাকা, মধুমতি, শ্যামলী, সনি, আনন্দ, পূরবীসহ আরও ৩৯টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পায় এবং অসাধারণ ব্যবসা করে যাচ্ছে। ৯ মে অবশ্য টাঙ্গাইলের মধুপুরেও ছবিটি মুক্তি পেয়ে দর্শক নজর কাড়ে। যৌথ প্রযোজনার এ ছবির সাফল্যে প্রেক্ষাগৃহ মালিকসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি। এ ব্যাপারে আনন্দ সিনেমার ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখলাম। লোকসান গুনতে গুনতে আমাদের নাভিশ্বাসে উঠেছে। এ ধরনের ছবি পেলে আমরা প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টরা বেঁচে যাব। অন্য প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষেরও একই কথা। ছবিটির এমন সাফল্যে আবার উজ্জীবিত হয়েছে নির্মাতারা। তারা চাচ্ছেন বেশি করে যৌথ আয়োজনের ছবি নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশা পূরণ হোক। এ কারণে এখন প্রায় অর্ধ ডজন যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শাকিব খান প্রযোজিত দুটি ছবি। এতে অভিনয় করবেন জিৎ, দেব ও পাওলি দাম। হাসিবুর রেজা কল্লোলের ছবি 'সত্তা'। এতে অভিনয় করবেন শাকিব ও পাওলি দাম। উত্তম আকাশের 'ঢাকার ছেলে কলকাতার মেয়ে' এতে থাকছেন শাকিব ও কলকাতার রোহিনী। অনন্য মামুন নির্মাণ করবেন জিৎকে নিয়ে একটি ছবি। চলচ্চিত্রকারদের মতে, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে।