থিয়েটারচর্চার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন?
ভালো লাগা, ভালোবাসা- তারপর দর্শনের জন্য যুক্ত হওয়া। তখন খুব ছোট, পাঁচ কি ছয় বছর বয়স। আমার একমাত্র ফুফাতো বোনের ড্রইংরুমে ভাগনিদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সামান্য ক্ষতি' কবিতার নাট্যরূপ দিয়ে সেখানে নির্বাক সৈনিকের অভিনয়। তারপর পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বার্ষিক নাটকে অভিনয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধের পর একটা রাজনৈতিক দর্শন থেকে থিয়েটারচর্চায় অতিমাত্রায় মনোযোগী হওয়া।
সম্প্রতি আপনার সংগঠন থেকে কী কাজ করেছেন?
রাজধানী ঢাকার মতো এখনো সারা দেশে বছরব্যাপী নাট্যচর্চার প্রসার ঘটেনি। শীতকালেই মূলত জেলা শহরগুলোতে নাট্যচর্চার ব্যাপকতা এখনো লক্ষণীয়। সেই বাস্তবতায় আমরা এর বাইরে যেতে পারিনি। বর্তমানে দলের পুরাতন প্রযোজনাগুলো রিহার্সেলের পাশাপাশি উপমহাদেশের প্রথম বাংলা নাটক 'কুলিন কুল সর্বস্ব'র পাণ্ডুলিপির অংশ অনুযায়ী পড়ছি এবং সেটা নিয়ে আলোচনা করছি। দুর্লভ এই পাণ্ডুলিপিটি গবেষক মোস্তফা তোফায়েল আমাদের দলকে দিয়ে কৃতজ্ঞতার বাঁধনে বেঁধেছেন।
স্থানীয় পর্যায়ে নাট্যচর্চায় আপনাদের কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি?
অনেক সমস্যা নিয়ে রংপুরের নাট্যদলগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কোন সমস্যা মূল সেটা বলা খুবই কষ্টকর। কারণ রংপুরের একমাত্র নাটক উপস্থাপন করার মঞ্চ হলো 'রংপুর টাউন হল'। এ হলটি নিয়ে রংপুরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা আছেন বড়ই বিপাকে। জনগণের সম্পত্তি হওয়ার পরও সাংস্কৃতিক কর্মীদের এটার ওপর কোনো ধরনের কর্তৃত্ব নেই। কারণ এই হলটি পরিচালনার জন্য নেই কোনো নীতিমালা বা কাঠামো। হলটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জেলা প্রশাসন। কারা এটা ব্যবহার করতে পারবে তার নেই কোনো নিয়মনীতি। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আছে নানা জটিলতা। মাসের অধিকাংশ সময় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সংগঠনকে [বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার] ভাড়া দেওয়া হয়। ইদানীং স্যাটেলাইটের কারণে হিন্দি সংস্কৃতির দাপটে লম্ফঝম্ফ সংস্কৃতি তিল তিল করে গড়ে তোলা নাটকের দর্শকদের মানসিকতা পরিবর্তন এবং টাউন হলবিমুখ করেছে। আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হলটির কোনো নিজস্ব জেনারেটর নেই।
থিয়েটারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা কীভাবে বাড়ানো যায়?
এককথায় যদি বলি তাহলে থিয়েটারের জন্য চাই সুনির্দিষ্ট মঞ্চ। যে মঞ্চে শুধু বাংলাদেশে বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধ যেসব দলের অন্তরে, তাদের বেশি বেশি প্রযোজনার ব্যবস্থা করা। সঙ্গে দরকার রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা। নাট্যদলগুলোকে অবশ্যই যুক্তি ও বাস্তবনির্ভর প্রযোজনা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে মানুষ আবারও নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় এবং তাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে।
থিয়েটার নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
থিয়েটার যেন একটা পেশায় রূপান্তরিত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত সব কলাকুশলী যেন এই পেশায় কাজ করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। সমাজ যেন থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বাঁকা চোখে না দেখে। এর জন্য কাজ করা এবং সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর