নায়করাজ রাজ্জাক
মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত গল্প ও চিত্রনাট্য। যার অভাব এখন প্রকট। সিনিয়র গল্পকার ও চিত্রনাট্যকারদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই। আমাদের দেশে সীমিত বাজেট দিয়ে বলিউড বা তামিল ছবির গল্প নকল করাও যে সম্ভব নয় তাও অনেকে বোঝেন না। ফলে দেশীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণের নিয়মের বাইরে গিয়ে এ শিল্পের বারোটা বাজিয়েছেন তারা। মনে রাখতে হবে, শুধু আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করা যাবে না, প্রয়োজন সত্যিকারের বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ। এর জন্য প্রয়োজন মৌলিক গল্প, যা এখন নেই বললেই চলে।
আমজাদ হোসেন
আমাদের চলচ্চিত্রের দর্শক এখন কোথায়? বিশেষ করে আমার চলচ্চিত্রের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে বলব আমার দর্শক তো প্রায় ২৫ বছর আগেই ঘরে ঢুকে গেছে। কারণ প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার পরিবেশ নেই, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ করে আসা অশ্লীলতার কারণে মধ্যবিত্ত এবং মহিলা দর্শক হলবিমুখ হয়েছেন। ভালো গল্পের অভাবে দর্শক আর প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন না। সঙ্গে রয়েছে নকল ছবির ছড়াছড়ি। অনেকে এখন নিজেদের সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে গল্প বলার চেষ্টা করছি। নিজস্ব গল্পের যথেষ্ট উপাদান থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে নিজেদেরই ক্ষতি করছি।
চাষী নজরুল ইসলাম
শুধু প্রযুক্তিগত গ্লামার দিয়ে তো দর্শক মন জয় করা যাবে না। গল্প ও অভিনয়ে জোর থাকতে হবে। যা এখন নেই। এখনকার গল্পে গভীরতা নেই। দর্শকহৃদয় দোলা দেবে এমন গল্প এখন কোথায়? নির্মাতাদের মধ্যেও জ্ঞান ও গুণের অভাব রয়েছে। বোম্বে এবং তামিল ছবির গল্পের নকল করতে অনেকে ব্যস্ত। কিন্তু আমাদের স্বল্প বাজেট দিয়ে তো তাদের ছবির গল্প নকলও সম্ভব নয়। এখনকার নির্মাতারা প্রযুক্তির মেধা নিয়ে কথা বলেন কিন্তু গল্প আর চিত্রনাট্যের অভাব নিয়ে চিন্তা করেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। মৌলিকত্ব নষ্ট হওয়ায় চলচ্চিত্র আর আবেদন রাখতে পারছে না।
ছটকু আহমেদ
উন্নত চলচ্চিত্রের পূর্বশর্ত হলো ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য। যা এখন নেই বললেই চলে। এখনকার নির্মাতারা তামিল-তেলেগু ছবির গল্প নকলের পেছনেই ছুটছেন। ফলে দেশীয় চলচ্চিত্র ক্রমেই ঐতিহ্য হারাচ্ছে। দর্শকও নিজেদের ছবি বিমুখ হচ্ছেন। আসলে নিজ দেশের কৃষ্টি ও সভ্যতা সমৃদ্ধ গল্প সহজেই মন কাড়ে এবং এর আবেদন দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই বিষয়টি থেকে এখনকার নির্মাতারা দূরে সরে গেছেন বলেই এখনকার ছবির স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। আমাদের চারপাশে গল্প লেখার উপকরণের অভাব নেই। তারপরও আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে উপেক্ষা করে চলচ্চিত্রের মান নষ্ট করছি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
নিজ দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি লক্ষ্য রেখে জীবনের গল্প বলতে হবে। মানে নকল নয়, আমাদের ঢংয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। আমাদের চারপাশে গল্প বলার আয়োজনের বা ফরমেটের অভাব নেই। তাহলে আমাদের তামিল বা তেলেগু ঢংয়ে গল্প বলতে হবে কেন? আমরা কেন আমাদের ঢংয়ে গল্প বলব না, এই প্রশ্নটি আমাদের নিজেদেরই নিজেদেরকে এখন করতে হবে। কয় বছর আগেও আমাদের চলচ্চিত্রে যে দুরবস্থা ছিল এখন তা কেটে উঠছে। নতুন প্রযোজনা সংস্থা, নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী, নতুন আঙ্গিকের গল্প আসছে এবং ভালো করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে সময় দরকার।
স্বপন আহমেদ
এখনকার নির্মাতাদের মধ্যে নকল প্রবণতা জেঁকে বসেছে। আগে ধ্যানধারণা ছিল শিল্পমুখী। আর এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বাণিজ্যিক। ফলে দর্শক বড় পর্দার গল্পে জীবনের প্রতিচ্ছবি আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু এক বা দুই মাসের মধ্যে যেনতেন গল্পে কোনোভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে এর মান নষ্ট হচ্ছে। এভাবে দর্শকদের বোকা বানাতে গিয়ে চলচ্চিত্রকাররা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থার উন্নতি তখনই ঘটবে যখন আমরা দর্শকদের এমন গল্প ও নির্মাণ দেব যা তারা আগে পাননি।