সংখ্যা বাড়ছে, মান কমছে : আনিসুল হক
আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি বড় হয়ে গেছে। প্রচুর নাটক প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এত নাটক নির্মাণ করার মতো দক্ষ নাট্যকার, নির্মাতা, শিল্পী আমাদের নেই। তাই দুর্দিন চলছে। যখন প্যাকেজ নাটকের যুগ শুরু হলো, তখন একজন নাট্যকার-নির্মাতা একটি নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করত, কিভাবে নাটকটি ভালো করা যায়। সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা তারা করতেন। কিন্তু এখন একজন নাট্যকার-নির্মাতাকে অনেকগুলো নাটক লিখতে হচ্ছে, নির্মাণ করতে হচ্ছে। তাই চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে সবাই হিমশিম খাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই শুধু সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, মান কমছে। তাই চ্যানেলগুলোর শুধু নাটকে জোর না দিয়ে অন্যান্য অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
আমরা দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে আছি : মাসুম রেজা
'নাটক'কে কেউ আর নিজের সন্তান মনে করছে না। আমি একটি নতুন নাটক লেখার পর নিজের সন্তান জন্ম দেওয়ার আনন্দ পাই। এটাই শিল্পীর ধর্ম। কিন্তু এখন এ শিল্পীসত্তার অভাব। এর মূল কারণ, আমরা নিজেদের পেশাদার মনে করছি। কাজ করছি, অর্থ পাচ্ছি। আর এখন তো নাটক থেকে রেসপন্স পাওয়া যায় না। রেসপন্স মানে অনুপ্রেরণা। এই অভাববোধ থেকেও আমরা শুধু পেশাদারি মনোভাব দেখাচ্ছি।
নাটক লেখা সাধনার বিষয়। প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু কতজন করছে সাধনা! নির্মাতা পাণ্ডুলিপি চাচ্ছে, নাট্যকার লিখে দিচ্ছে। ফিলোসফি নেই কোনো। আর সব সময় মনে হয়, আমাদের শিল্পে এখন আর পৃষ্ঠপোষকতা নেই, রয়েছে পৃষ্ঠপ্রদর্শন। সব মিলিয়ে আমরা দুষ্টচক্রের মধ্যে আছি।
ইনস্ট্যান্ট নাটক নির্মাণ হচ্ছে : গিয়াসউদ্দীন সেলিম
টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বেশি পরিমাণে নাটক দরকার হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় গল্প কোথায়? বর্তমানে প্রায় ২৪টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এগুলোর জন্য ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো কম সময়ে ইনস্ট্যান্ট নাটক নির্মাণ হচ্ছে। তাই তাড়াহুড়ো করে নির্মাণ করতে গিয়ে গল্প বা নির্মাণের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে একবারেই যে ভালো গল্পের নাটক হয় না তা কিন্তু নয়। সেই নাটক দর্শক তো দেখতে পারছে না। কারণ, এখন তো বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যই নাটক প্রচার হয়। এতে ভালো গল্প বোঝার উপায় নেই। দর্শক বিরক্ত হয়ে বিদেশি চ্যানেলে চলে যায়। আমি নিজেও দেশি প্রোগ্রাম দেখতে পারি না। এক ঘণ্টার নাটক তিন-চার ঘণ্টা ধরে দেখবে সেই সময় কি কারও আছে?
সংকটটা গল্পের চেয়ে বেশি সময়ের : পান্থ শাহরিয়ার
আমার মনে হয়, সংকটটা গল্পের চেয়ে বেশি সময়ের। নির্মাতারা সময় বেঁধে দেয়, সেভাবে নাটক লিখতে হয়। এই অল্প সময়ে নাট্যকার কমিটমেন্ট রক্ষা করবে নাকি গল্পের গভীরে ডুব দেবে! তারপর চ্যানেল প্রচুর। ধরুন এক ঈদে ৩০০ নাটক প্রচার হয়। একজন নাট্যকার ৩টি করে নাটক লিখলেও ১০০ নাট্যকার। কিন্তু আমরা কতজন নাট্যকারকে চিনি? তার মানে গল্প নয়, কোনো মতে একটা পাণ্ডুলিপি হলেই চলে। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
আমরা কথায় কথায় হিন্দি নাটকের উদাহরণ দিই। আচ্ছা হিন্দি নাটক যারা লিখছেন বা নির্মাণ করছেন, তারা কি অন্য কোনো নাটক করছে? না। একটি নাটক নিয়েই তারা ভাবছে। কারণ তাদের সেভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়। সমস্যা আসলে অনেক।