'আমাকে বিয়ে করার মাধ্যমে হৃদয়ের একটা চাহিদা পূরণ হয়েছিল মাত্র। অর্থাৎ বিয়ের আগে আমার প্রতি সে যতটা পাগল ছিল, বিয়ের পর ঠিক ততটাই দূরে সরে যাচ্ছিল। হৃদয়ের ভালোবাসা লোকদেখানো। এক কথায় বলতে গেলে, আমাকে পাওয়া শেষ, আর হৃদয়ের চাওয়া শেষ। ও একটা ইমম্যাচুরড ছেলে। ওর আরও ম্যাচুরিটি প্রয়োজন সংসার গড়ার জন্য।' বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন সুজানা।
গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ ঘটে হৃদয় খান ও সুজানার। এরপর থেকেই টক অব দ্য মিডিয়ায় পরিণত হয় তাদের এ বিচ্ছেদের ঘটনা। ভক্তমহলেও ব্যাপক তোলপাড় এ খবরে। গত বছরের আগস্টে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। অর্ধ বছর পাড়ি না দিতেই টুকরা হয়ে গেল তাদের উঠতি সংসার। বিচ্ছেদের এ সিদ্ধান্ত কেন নিতে হলো জানতে চাইলে সুজানা বলেন, 'প্রত্যেক মেয়েরই একটা স্বপ্ন থাকে। হৃদয়ের সঙ্গে বিয়ের পর সে স্বপ্নটি আমি বুনতে শুরু করেছিলাম। আমি ছোটবেলা থেকেই অনেকটা ধর্মভীরু। তাই বিয়ের পর হৃদয়ের জন্য দোয়া করতাম, বলতাম আমরা যেন সুখে থাকতে পারি। কিন্তু স্বপ্নের গোড়াতেই সবকিছু চুরমার হয়ে যায়। বিয়ের প্রায় দেড় মাস পর্যন্ত হৃদয় ঠিক আগের মতোই ছিল। কিন্তু এরপর থেকে হৃদয়ের পরিবর্তন হতে থাকে। বিয়ের আগে হৃদয় উচ্ছৃঙ্খল ছিল। তাকে আমি নিজে ঠিক করি। বিয়ের দেড় মাস পর থেকেই তার এই সমস্যাগুলো শুরু হতে থাকে। সে কাউকে মানে না। তার মূল সমস্যাটা হলো সম্মানবোধ নেই; যাকে যা খুশি তাই বলে।'
যে কিনা আপনাকে এত ভালোবাসত তার সঙ্গে কেন এত সমস্যার সৃষ্টি হলো জানতে চাইলে সুজানা বলেন, 'হৃদয়ের ভালোবাসা ছিল লোকদেখানো। বিয়ের আগে আমার জন্য সে অনেক পাগলামি করেছে। ফেসবুক থেকে শুরু করে টেলিভিশনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও পত্রিকায় ঘটা করে বলেছে, সে আমার জন্য পাগল। বলতে পারেন সে ভালোবাসাটা তখন একতরফা ছিল। ধীরে ধীরে আমিও তাকে বুঝতে শুরু করি। আমার দুজন ভালো বন্ধু ছিল একজন হৃদয় খান ও অন্যজন সংগীতশিল্পী নির্ঝর। হৃদয় আমার ভালো বন্ধু ছিল কিন্তু কখনো তাকে বর হিসেবে চিন্তা করিনি। একটা সময় আমার পরিবারের লোকজন দেখে যে, ও আমার জন্য মরিয়া, এমনকি পরিবারের কাছে এসে আমাকে বিয়ের জন্য কান্নাকাটি করেছে। অথচ এই হৃদয়ই বিয়ের পর আরেক হৃদয় হয়ে উঠে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, সেটা হলো বিয়ের তারিখ প্রসঙ্গ। শেষ পর্যন্ত যখন হৃদয়কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই তখন তাকে বলি, বিয়েটা যেন ডিসেম্বরে হয়। অথচ হৃদয় শুরু করল পাগলামি। আমার এখনো মনে আছে সেই সময় রমজান মাস ছিল, তাই তাকে বললাম এখন নয় ডিসেম্বরে। একপর্যায়ে তার পীড়াপীড়িতে আগস্টে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। বিয়েতে
তার বাবা-মা ছিলেন না। ছিলেন শুধু খালা-খালু। অথচ এখন আর হৃদয়ের সেই ভালোবাসা নেই। ও পুরোপুরি বদলে গেছে।'
সুজানা আরও বলেন, 'মিডিয়াতে আমি খুব একটা কাজ করি না। বেছে বেছে কাজ করি। এতেও বাদ সাধে হৃদয়। প্রায়ই সে বলত, আমি নাকি বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে ইচ্ছা করে ছবি উঠানোর পোজ দিই। এসব নিয়েও তিক্ততা সৃষ্টি হয় সংসারে। অন্যদিকে হৃদয়ের বাবা প্রায়ই বলে বেড়ান, আমি নাকি হৃদয়কে তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়েছি। যা মোটেও সত্য নয়।' পরিবারের সঙ্গে হৃদয়ের দূরত্ব নিয়ে সুজানা বলেন, 'আমার সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত না হৃদয়। থাকত সে নিজের অফিসে। কখনো বাবা-মার জন্য ঘরমুখো হতো না। এমনকি আগের স্ত্রীকে নিয়েও বাবা-মার সঙ্গে থাকত না সে। হৃদয় আগে থেকেই পরিবার ছাড়া। অথচ আমাকে দোষ দিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলতেন হৃদয়ের বাবা। একটা কথা আবারও বলতে চাই, যে ছেলে নিজের পরিবারকে সম্মান দিতে পারে না বা পরিবারের সঙ্গে থাকে না, সে কীভাবে সংসার রক্ষা করবে? আরেকটি কথা না বললেও নয়। সেটি হলো হৃদয়ের প্রথম বিয়ের কথা।'
হৃদয়ের প্রথম বিয়ে নিয়ে সুজানা বলেন, 'আমার প্রথম বিয়ের কথা সবাই জানে। কারণ আমি স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু হৃদয়ের প্রথম বিয়ের খবর অনেকেই জানে না। তার প্রথম স্ত্রীর নাম পূর্ণিমা। সে বিষয়ে আমার কোনো অভিযোগ বা আক্ষেপ নেই। পরিশেষে একটা কথা আবারও বলতে চাই, হৃদয়ের ভালোবাসা ছিল শুধুই লোকদেখানো। যেটা আগে বুঝতে পারিনি। বুঝলাম তবে অনেক দেরিতে।'
ডিভোর্স প্রসঙ্গে সুজানা বলেন, 'দুই পরিবারের সম্মতিতেই ডিভোর্স হয়েছে। আমাদের মধ্যে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বা দাবি-দাওয়া নেই। আমরা দুজন এখন দুই মেরুর। হৃদয়ের জন্য আমার শুভ কামনা রইল।'
এদিকে ডিভোর্সের ব্যাপারে হৃদয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বার বার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কিন্তু তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় সবাইকে ডিভোর্সের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ভিডিও বার্তায় ডিভোর্সের কথা প্রকাশ করায় তিনি ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন।