খ্যাতিমান মিশরীয় অভিনেতা ওমর শরীফ আর নেই। 'লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া' আর 'ডক্টর জিভাগো'র মতো সিনেমার এই অভিনেতা শুক্রবার কায়রোর একটি হাসপাতালে মারা যান। ৮৩ বছর বয়সী এই অভিনেতার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।
ওমর শরিফের মুখপাত্র স্টিভ কেনিস নিশ্চিৎ করেছেন তার মৃত্যুর খবর। চলতি বছরের শুরুতে তার ছেলে তারেক আল-শরিফ জানিয়েছিলেন আলঝেইমার্স রোগে ভুগছিলেন তিনি।
পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে মিশরীয় সিনেমা ‘সিরা ফিল-ওয়াদি’ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ওমর শরিফ দ্রুতই নিজ দেশে খ্যাতির শীর্ষে উঠে যান। ১৯৫৫ সালে মিশরীয় অভিনেত্রী ফাতেন হামামাকে বিয়ে করার জন্য তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। লেবানিজ ক্যাথোলিক পরিবারে জন্ম নেওয়া শরিফের আসল নাম ছিল মিচেল শালহাউব।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করার পর কিছু দিন পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেন শরিফ। এরপর অভিনয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলে লন্ডনের রয়াল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টে ভর্তি হন তিনি।
ওমর শরিফ আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন ডেভিড লিনের বিখ্যাত সিনেমা ‘লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’য় অভিনয় করে। সিনেমার শেরিফ আলি চরিত্রে মরুভূমির গনগনে বালুরাশির মধ্য দিয়ে তার উটে সওয়ার হওয়ার দৃশ্যটি রাতারাতি তাকে বিখ্যাত করে তোলে। এই সিনেমার মাধ্যমেই অভিনেতা পিটার ও’টুলের সঙ্গে আজীবন বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপিত হয় ওমর শরিফের।
সিনেমাটির জন্য সে বছর দুটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসহ পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার মনোনয়ন পান।
ডেভিড লিন এরপর ১৯৬৫ সালে তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ডক্টর জিভাগো’। রুশ বিপ্লবে জড়িয়ে পড়া এক চিকিৎসকের ভুমিকায় অভিনয় করে তিনি জিতে নেন তার দ্বিতীয় গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড।
ওমর শরিফকে পরবর্তীতে আরও দেখা গেছে চেঙ্গিস খান এবং চে গুয়েভারার মতো ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করতে। তবে শেষ দিকে অভিনয়ের চেয়ে ব্রিজ টেবিলেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এই সময়ে বিশ্বের সেরা ব্রিজ খেলোয়াড়দের একজন হয়ে ওঠেন তিনি।
তবে এই সময়ে তার অভিনয় ক্যারিয়ারের গ্রাফ ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি ঘোষণা দেন অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার।
তবে ২০০৩ সালে ‘মসিয়ে ইব্রাহিম’ নামের একটি ফরাসি সিনেমা অভিনয় করেন। প্যারিসের এক মুসলিম দোকানদার, যে এক ইহুদি বালককে দত্তক গ্রহণ করে- এমন এক চরিত্রে অভিনয় করে তিনি অর্জন করে নেন ফ্রান্সের শীর্ষ চলচ্চিত্র পুরস্কার, সিজার অ্যাওয়ার্ড।
শেষ জীবনে পরিবারের সঙ্গে কায়রোতেই বসবাস করতেন ওমর শরিফ। এছাড়াও প্রিয় ফুটবল দল হাল সিটিকে সমর্থন জানাতে তাদের খেলা দেখতেও উপস্থিত হতেন তিনি। দুই নাতির মধ্যে ওমর শরিফ জুনিয়র দাদার পদাঙ্ক অনুরণ করে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১১ জুলাই ২০১৫/ এস আহমেদ