বিয়ে নামক শাশ্বত সামাজিক রীতির এই স্বীকৃত ও পবিত্র বন্ধনকে ব্রিটেনের বর্ডার এজেন্সি ও পুলিশ দেখছে সে দেশের স্থায়ী হওয়ার 'গোল্ডেন টিকেট' হিসেবে।
বর্ডার এজেন্সি সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, মূলত ইস্টার্ন ইউরোপ থেকে আগতরা ব্রিটেন এসে এই ভুয়া বিয়ের ব্যবস্থা করে এবং তাদের লক্ষ্য মূলত এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর আফ্রিকার নাইজেরিয়ান কমিউনিটি। যাদের মধ্যে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত এই ভুয়া বিয়ে বছরে ব্রিটেনে রেজিস্ট্রিকৃত হয়ে থাকে।
বর্ডার এজেন্সির ওয়াচ ডগ-এর চিফ ইনস্পেক্টর জন ভাইন বলেছেন, এই সব ভুয়া বিয়ে অধিকাংশই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বহু রেজিস্ট্রি অফিসের মাত্র কিছু ভুয়া বিয়ে এক্ষেত্রে অবহিত করা হয়েছে, অথচ অধিকাংশই প্রতিবেদনের বাইরে রয়ে গেছে। রেজিস্ট্রি অফিসের উচিত এরকম কোনও সন্দেহভাজন বিষয় হলে তাৎক্ষণিকভাবে হোম অফিসকে জানানো। কারণ এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বর্ডার এন্ড ইমিগ্রেশন অফিসার ক্যারল অ্যান স্যুইনি বলেছেন, মিডল্যান্ডসের ব্যাপক ডাইভার্সিটি কমিউনিটির ভুয়া বিয়ের উপস্থিতির বিষয়ে অফিসকে অবহিত করা হয়নি, যে কারণে সেই সব ভুয়া বিয়ের ব্যাপারে ডিল করাটা খুবই কঠিন হয়ে আছে।
তিনি জানান, যে কারও ব্রিটেনে এসে এরকম ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে আবেদন করলে পাঁচ বছর থাকার অনুমতি সহজেই মিলে যায় এবং তারপর সিটিজেনশিপও লাভ করা যায়।
এদিকে হোম অফিস তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, ব্রিটেনে তাদের মতে প্রতি ঘণ্টায় একটি বিয়ে ইমিগ্রেশনের এই ফাঁকের সুযোগে এই সব ডাইভার্স কমিউনিটির বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়ান কমিউনিটি ও এর জনগণ ভুয়া বিয়ের ব্যবস্থা করে চলেছে। এসব বিয়ে কখনও রেজিস্ট্রি করে, কখনও চার্চের মাধ্যমে আবার কখনও তাদের নিজেদের মধ্যকার ফেইথ ম্যাটারের মাধ্যমে বা প্রিস্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। আর পূর্ব ইউরোপের গরিব নাগরিকেরা এ সুযোগে মোটা অংক কামিয়ে নিচ্ছে।
এক তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে, বিগত ১০ মাসে ভুয়া বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৬০৬টি। এর মধ্যে হোম অফিস ৯০ জনকে গ্রেফতার করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। হোম অফিসের গোপন নথিতে এই ভুয়া বিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের সাথে সাথে এই সব কমিউনিটিতে ধর পাকড় শুরুর নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
ইমিগ্র্যাশন ম্যারিজ ফ্রড ইউকে টিম এসব ভুয়া বিয়ে রোধে কাজ করে যাচ্ছে বলে দ্য সান, ডেইলি টেলিগ্রাফ, ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, বিবিসি রেডিও গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২০ ফেব্রুয়ারি দুটি বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
গত বছর ব্রিটেনের খ্যাতনামা টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল স্কাই নিউজ তাদের এক্সক্লুসিভ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ব্রিটেনে প্রতি পাঁচ জনের একটি বিয়ে ভুয়া বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে।
ওই সময় সিনিয়র রেজিস্ট্রাররা মার্ক রিমারের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে স্কাই জানিয়েছিল, ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের ২০% বিয়েই সন্দেহমুক্ত নয়। সে সময় পর্যন্ত প্রতিবেদনে ১ হাজার ৮০০ বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন বার্তা মি. রিমার সরকারকে দিয়েছিলেন।
এদিকে লিবার্টি গ্রুপ দাবি করছে, এসব ফেইক ম্যারেজ সম্পন্ন করার জন্য এই চার কমিউনিটিতে নানা নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এটাকে তারা এক ধরনের ব্যবসায়িক মুনাফা লোভী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখছে।