মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে উত্তরণ ঘটে অনেক আগেই। এখন তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে রাজধানী কলম্বোতে গিয়ে সমাজতন্ত্রীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এই ‘বিপ্লবে’ নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২০ বছর বয়সে তাঁকে দুই বছর কারাগারে থাকতে হয়। এরপর অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হলেন সিরিসেনা।
নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। সেই সিরিসেনার কাছেই হার মানতে হয়েছে রাজাপক্ষেকে। প্রার্থিতা ঘোষণার পর রাজাপক্ষের সমর্থকরা সিরিসেনাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলতে দ্বিধা করেননি। তখনই তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, এ ঘোষণা রাজাপক্ষের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। সেই আশঙ্কাই এখন সত্যি হলো। রাজাপক্ষেকে হারিয়ে দেশটির সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শপথ নিয়েছেন সিরিসেনা।
প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) যুব শাখায় ১৯৬৭ সালে যোগ দেন। আর ১৯৮১ সালে এসএলএফপির পলিট ব্যুরোতে যোগ দেন সিরিসেনা। শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। ১৯৮৯ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হন। পরবর্তীতে দল ও সরকারে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালে তামিল টাইগারদের হামলার শিকার হয়েছিলেন, তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান। গত নভেম্বর পর্যন্ত এসএলএফপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। নির্বাচনের আগে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, রাজনৈতিক লুণ্ঠন ও সহিংসতা থেকে দেশকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন সিরিসেনা। অন্যদিকে রাজাপক্ষে সমর্থকরা বলেন, নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রক্সি প্রার্থী হয়েই লড়েছেন সিরিসেনা। কিন্ত্ত প্রচারের সময়ই তিনি বলেছিলেন, বিজয়ী হলে তিনি সংবিধানের অষ্টাদশ সংশোধনী পরিবর্তন করে সপ্তদশ সংশোধনী ফিরিয়ে এনে প্রেসিডেন্টের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে খর্ব করবেন এবং বিরোধী দলনেতা রানিল বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন।
১৯৫১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিংহলিদের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত মধ্য-উত্তর শ্রীলঙ্কার পোলোনারুয়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি ছোটবেলা থেকেই নম্র-ভদ্র, মৃদুভাষী ও মিশুক। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সিরিসেনা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। বাবা অ্যালবার্ট সিরিসেনা ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত বীরসেনা। পাঁচ একর আবাদী জমি পুরস্কার হিসেবে পাওয়ার পর তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এদিকে ৬৩ বছর বয়সী সিরিসেনা সাধারণ এবং পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করেন। গ্রামীণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় সিরিসেনা মদ এবং ধূমপান করেন না। ইংরেজি বলাতেও তার প্রবল অনীহা। কলম্বোর অভিজাত সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজকে এড়িয়ে চলেন তিনি। তবে সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং কয়েক দশকব্যাপী জাতিগত সংঘাত নিয়ে তার চিন্তাভাবনা এখনও জানা যায়নি। শ্রীলঙ্কায় বিবিসির সাবেক প্রতিনিধি চার্লস হেভিল্যান্ডের মতে, রাজাপক্ষের মতো সিরিসেনা আমুদে নন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০ জানুয়ারি, ২০১৫/ রোকেয়া।