সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে উপাচার্য হিসেবে প্রথম নারী নেতৃত্বের সূচনা ঘটল। বাংলাদেশে আলোকিত নারীদের তালিকায় নাম লেখালেন তিনি। এ দেশের লাখ লাখ নারীর মাঝে উৎসাহ জোগাতে সক্ষম হলেন তিনি। দেশের আলোকিত এই প্রথম নারী উপাচার্য বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে আমাকে অত্যন্ত কঠিন সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন নারী হয়ে উপাচার্য হওয়ার পর বুঝলাম, এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে আচার্য এবং প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তারা জাতির জন্য, বিশেষ করে নারীদের জন্য এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। নিঃসন্দেহে এটা নারীদের জন্য অনেক বড় সফলতার দিক, যা দেশের সব নারীকে অনুপ্রাণিত করবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের জন্ম রাজধানী ঢাকার রমনা এলাকায়। তিনি ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, বেগম বদরুন্নেচ্ছা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ড. ফারজানা ১৯৮২ সালের ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে রেখেছেন নানা কৃতিত্বের স্বাক্ষর। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি বর্তমানে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ডের আন্তঃবহির্সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে তিনি মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা 'নাগরিক উদ্যোগ'-এর চেয়ারপারসন, নগর গবেষণা কেন্দ্রের আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। পাশাপাশি বর্তমানে তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। এই আলোকিত নারীর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের একান্ত আলাপচারিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল :
নারীদের সামনে অগ্রসরের ক্ষেত্রে আপনার অভিমত কী?
ড. ফারজানা ইসলাম : নারী-পুরুষ উভয়ই এ দেশের সমান অংশীদার। সামনে অগ্রসরের ক্ষেত্রে নারীদেরও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। অথচ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকসহ সব জায়গায় নারীরা পুরুষের তুলনায় বঞ্চিত। মূলত এ বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে নারীদের বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন পুরুষের একান্ত সহযোগিতা। পাশাপাশি চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নারী নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়নকে কীভাবে দেখছেন?
ড. ফারজানা ইসলাম : নারী-পুরুষ সবারই সমান অধিকার রয়েছে । নারীরাও নেতৃত্বের অংশীদার হতে চায়, তাই নেতৃত্বের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অংশগ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে।
এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. ফারজানা ইসলাম : দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দেশে এবং দেশের বাইরে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হব। শিক্ষার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠকের ব্যবস্থা করব।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. ফারজানা ইসলাম : মাত্রই দায়িত্ব পেলাম, প্রথমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনব, তারপর ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু), হল সংসদ ও বিভাগীয় সংসদের নির্বাচনের বিষয়ে সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে আপনার অভিমত কী?
ড. ফারজানা ইসলাম : জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষক রাজনীতির প্রয়োজন আছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এর মাত্রাতিরিক্ত প্রতিফলন ঘটলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। তাই শিক্ষক রাজনীতি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের কথা স্মরণ রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
ড. ফারজানা ইসলাম : ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে ভালো হয়। তবে পড়াশোনাটাই মুখ্য হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। -সাক্ষাৎকার গ্রহণে নাহিদুর রহমান হিমেল