শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা আট দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থার পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে যাচ্ছেন। আজকালের মধ্যে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অবশ্য কখন এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে গত রাতে সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি শিক্ষকনেতারা। গত সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিক্ষকনেতাদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে শিক্ষকনেতারা জানান, দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা ধরে তাদের কথা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য ধরে নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, তিনি শিক্ষকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে পিঠা উৎসবে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকনেতারা। তারা সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অবস্থান করেন। ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি আমাদের দাবির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের সমস্যা সমাধান করার আশ্বাসও দিয়েছেন। ফেডারেশনের মিটিং করে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতি শেষ হচ্ছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে এই শিক্ষকনেতা বলেন, ‘সিদ্ধান্ত দিতে হলে ফেডারেশনের মিটিং হতে হবে। এর বাইরে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকদের এই দলে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ছিল বলেও জানান তিনি। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল এবং সিনিয়র অধ্যাপকদের সিনিয়র সচিবের মর্যাদা প্রদানসহ কয়েক দফা দাবিতে আট মাস ধরে থেমে থেমে কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষকরা। গত সোমবার থেকে টানা কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এতে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। রবিবার একই দাবিতে শিক্ষকরা শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের কাছে প্রস্তাবনা তুলে দেন। এতে শিক্ষকনেতারা উল্লেখ করেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অধ্যাপকের মধ্য থেকে ৫ শতাংশকে ডিস্টিংগুইশড (বিশিষ্ট) অধ্যাপক করতে হবে। এ পদের মূল বেতন হবে জ্যেষ্ঠ সচিবের সমান। একই সঙ্গে আগের মতো মোট অধ্যাপকদের মধ্য থেকে ২৫ শতাংশকে গ্রেড-১ করারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। এ প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই শিক্ষকনেতারা প্রধানমন্ত্রীর পিঠা উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের ফলে আশা করছি বরফ গলতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে না পারলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেভাবে কাজ চলছে, আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’

শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে গতকাল অষ্টম দিনের মতো অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রবিবার উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন ইউনুছ আলী আকন্দ নামের এক আইনজীবী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে কোনো ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল কম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গতকালও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে তারা এসব কর্মসূচি পালন করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এলেও শিক্ষকরা আসেননি। তবে অন্যান্য দিনের মতোই চলেছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে অংশ নিয়ে গতকালও ক্লাস নেননি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের কর্মবিরতির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অঘোষিতভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন। ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতির হারও কমে গেছে। ঢিলেঢালাভাবেই চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।

সর্বশেষ খবর