মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্থ মন্ত্রণালয় মানে না প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা

কৃষিপণ্যের সুবিধা পাবে না পাটজাত পণ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও পাটপণ্যকে সরাসরি ‘কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রপ্তানি সুবিধা দেওয়ার পক্ষে নয় অর্থ মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে একাধিক চিঠি দেওয়ার পরও এ প্রসঙ্গে কোনো মতামত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি তারা। চতুর্থ চিঠির পর এক মতামতে গত সপ্তাহে অর্থ বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্তে পাটপণ্যকে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের দ্বিমত নেই। তবে, পণ্যটি রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির ন্যায় সুবিধা পাবে না সরকারের কাছ থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের  এ ধরনের মতামত পাওয়ার পর পাট ও পাটজাত পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটকে বিমাতাসূলভ দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরাও। গতকাল সচিবালয়ে এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পাট ও পাটজাত পণ্যকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার বিষয়টি ধৃষ্টতামূলক।’ অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেয়ে আসলেও কৃষিভিত্তিক ফসল পাট এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ ও পাট সুতার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সুবিধা কমিয়ে পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ এবং সুতার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অথচ ভারতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে পাটপণ্য পুরোপুরি সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশের পাট খাত। সূত্র জানায়, গত প্রায় ৩ দশক ধরেই পাটপণ্যকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে এই খাত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে আগের সরকারগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তবে দাতা সংস্থাগুলোর আপত্তির মুখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি বিগত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারেই পাট খাতের উন্নয়নের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিবেশ বান্ধব পাটপণ্যের ব্যবহার কয়েকটি খাতে বাধ্যতামূলক করা ছাড়াও পাটকলগুলোর সংস্কার ও পাট চাষিদের সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে পাটজাত পণ্যকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার ঘোষণা দেন। ২৪ মার্চ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাটজাত পণ্যকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য চিঠি পাঠানো হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ে। এরপর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে পরপর চারটি চিঠি দেওয়ার পর গত ১৫ জুন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল জানিয়ে দেয়, ‘সরকারি সিদ্ধান্তে পাটজাত পণ্যকে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে, পাটজাত পণ্য কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকাভুক্ত হলেও রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি ভর্তুকি প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে অন্যান্য কৃষি পণ্যের ন্যায় ২০ শতাংশ নগদ সুবিধা পাবে না। পাটজাত কৃষিপণ্যকে তার স্বকীয়তা/বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আলাদাভাবে বিবেচনা করে রপ্তানি ভর্তুকি/ নগদ সহায়তার হার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ’ বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, এটি একটি বিভ্রান্তিকর মতামত। পাট বিদেশ থেকে উড়িয়ে আনা কোনো পণ্য নয়। এ দেশের মাটি পানি বাতাসে বেড়ে ওঠা একটি কৃষিভিত্তিক ফসল। এ থেকে উত্পন্ন পণ্যও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পাটজাত পণ্যকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত না করে বিভ্রান্তিকর মতামত দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশার। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলেন, পাটশিল্প দেশের একমাত্র শিল্প যা শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে এবং শতভাগের বেশি মূল্য সংযোজন করে থাকে। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে জড়িত। পাটকে আলাদা কোনো কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। পাট অন্যান্য পণ্যের মতোই এ দেশের কৃষি পণ্য। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এখন বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এ অবস্থায় পাটপণ্যকে কৃষিপ্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে অর্থ বিভাগের নেতিবাচক অবস্থান বিমাতাসুলভ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর