২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন (এনসিসি)। এ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে ‘অবৈধ’ অস্ত্রের মহড়া। দাগী অপরাধীদের হাতে অন্তত সহস্রাধিক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ থানা এলাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৯৭১টি বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকার তিনটি থানায় রয়েছে ৫৮৬টি। যার মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪০৩, বন্দর থানায় ৮৯ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৯৪টি। এদিকে মেয়রসহ সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল কাউন্সিলর প্রার্থীদের আংশিক যাচাই-বাছাই হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করে এসব বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। ২০ নভেম্বর থেকে আগামীকাল পর্যন্ত প্রশাসন ওয়ারেন্টের আসামিসহ অস্ত্রধারী দাগী গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। যদিও গত এক সপ্তাহে এ অভিযানে পুলিশ উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। বিগত সময়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র লক্ষ্য করা গেছে। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি পরিচালনা করতে অনেকেই গড়ে তুলেছে বাহিনী। এদের রয়েছে অস্ত্রের মজুদ। গেল দুই বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অর্ধশত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে; যার বেশির ভাগই বিদেশি। এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৮০ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে। সিটি নির্বাচন ঘিরেও সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র মজুদ করছে। পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় রিমান্ডে এসব অস্ত্রধারী নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জে সহস্রাধিক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা শুধু অস্ত্র ব্যবসা ও ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে নাসিক নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রশাসন লক্ষণীয় তত্পরতা চালাবে। নাসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান কয়েক দিন ধরেই বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।থানাভিত্তিক বৈধ অস্ত্রের পরিসংখ্যান সম্পর্কে পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত। এ এলাকার ৯৪টি, বন্দর থানার ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৯৪টি ও সদর মডেল থানার ১০ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৮০টি অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে ১০৩টি অস্ত্র জমা রয়েছে। রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রার্থীই এখনো অভিযোগ করেননি। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে, নিরাপত্তা বজায় রাখতে চাঁদাবাজ-মস্তানদের তালিকা হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন কমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী র্যাব কাজ করবে বলে জানিয়েছে র্যাব-১১। গতকাল সন্ধ্যায় র্যাব-১১-এর সিও লে. কর্নেল কামরুল হাছান বলেন, এনসিসি নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই র্যাবের আলাদা নজরদারি থাকবে।
১০ জনের মনোনয়ন বাতিল : এনসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। দুই দিনব্যাপী বাছাইয়ের প্রথম দিন গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বাছাইয়ে তথ্য ভুল ও গোপন, ঋণ খেলাপ, বয়স কম ১০ জনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যাদের প্রার্থিতা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে তারা ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া তাদের প্রার্থিতা বৈধ প্রমাণের জন্য ৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় রয়েছে। নির্বাচনে নয়জন মেয়র, সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর পদে ৩৮ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
আনোয়ারকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন : নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মোবাইলে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ এ দুই নেতা অসুস্থ আনোয়ারকে সাহস দেন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত। এদিকে অসুস্থ আনোয়ার হোসেনকে দেখতে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
পারলেন না নীলা : জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বদৌলতে তিনি আলোচিত, সমালোচিত। নূর হোসেনের বান্ধবী হওয়ায় প্রচণ্ড দাপট ছিল তারও। সেভেন মার্ডারের পর নিজেই অকপটে নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি। তবে এই নীলা এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। সময় শেষ হওয়ার ৪ মিনিট পর মনোনয়ন ফরম জমা দিতে যান বর্তমান কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। কিন্তু সময় শেষ হওয়ায় তার ফরম জমা নেননি নির্বাচন কর্মকর্তারা। জমা দিতে না পারার প্রতিক্রিয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা জানান, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তবে মনোনয়ন জমার বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সংরক্ষিত এই ওয়ার্ডে নমিনেশন ফরম জমা দিয়েছেন ৫ প্রার্থী।
পেছনে ফেরা : ২০১১ সালে নির্বাচনে জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধাসহ নানা সুবিধা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এক সময় নূর হোসেনের সঙ্গে নীলার সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। নূর হোসেনের সঙ্গে নীলা সম্পর্ক করতে গিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নীলাকে অনেক বেশি মূল্যায়ন করত নূর হোসেন। তাদের মধ্যে নিবিড় এ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল ব্যাপক। কিন্তু যে যা-ই বলত তেমন একটা গায়ে মাখেননি নূর ও নীলা। নীলাকে ২৭ লাখ টাকা দিয়ে প্রিমিও গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন নূর হোসেন। বাড়িতে দামি আসবাবপত্র সবই দিয়েছেন। এক সময় স্বামী সায়েম প্রধানকে ছেড়ে নূরের কব্জায় চলে যান নীলা। স্বাভাবিকভাবেই তারা একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের ভিতর এবং দেশের বাইরে। কিন্তু এক সময় তাদের সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে।