রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

গণহত্যা দিবস ২৫ মার্চ প্রস্তাব গৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। গতকাল প্রায় ৭ ঘণ্টা আলোচনার পর সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য এ আলোচনায় অংশ নেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের চতুর্দশ ও শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি পালন এবং স্বীকৃতি আদায়ের এ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। এর আগে প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে স্পিকার প্রস্তাবটি গণভোটে দিলে টেবিল চাপড়িয়ে সব এমপি এর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

গতকাল বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে স্পিকারের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে প্রস্তাবটি প্রত্থাপন করেন ফেনী-১ আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের এমপি শিরিন আখতার। প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।’ প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণায় ‘জেনোসাইড’-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন হয়েছে সেদিন বাঙালির ওপর। তিনি প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণের জন্য সংসদের প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের ৫৬ জন সদস্য ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। এর আগে জাসদের এমপি শিরিন আখতার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে টিক্কা খানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সামরিক অভিযানে সংঘটিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও বর্বরতার চিত্র তুলে ধরে দিনটিকে (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রস্তাব আনেন।

কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী : একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের নির্মমতার ‘সচিত্র প্রতিবেদন’ দেখানো হলো গতকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে সংসদ কক্ষে রাখা বড় পর্দায় একাত্তরে পাক বাহিনীর নির্মমতার বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ভিডিও দেখানো হয়। শরণার্থীদের দেশ ত্যাগ এবং গণহত্যার ছবি দেখানোর সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বেশ কয়েকবার চোখ মুছতে দেখা যায়। এ সময় সংসদে ছিল পিনপতন নীরবতা। অব্যক্ত চাপা কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে তখন সংসদ কক্ষ।

এ দেশ তাদের নয় : জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চালানো গণহত্যার কথা যারা ভুলে যায়, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি আরও বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দহরম মহরম করে, তাদেরও পাকিস্তানে চলে যাওয়াই ভালো। এই বাংলাদেশে তারা থাকলে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য সবসময় দুর্ভাগ্যে পরিণত হবে।

সংসদের অধিবেশন সমাপ্ত : ৩২ কার্যদিবসে দশ বিল পাস ও একটি প্রস্তাব গ্রহণের পর দশম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ ও শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছে। গতকাল রাত ১০টা ৪০মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান। গত ২২ জানুয়ারি সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

সমাপনী ভাষণে স্পিকার অধিবেশন সফলভাবে সমাপ্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, আজকের দিনসহ (শনিবার) মোট ৩২টি কার্যদিবস অতিবাহিত হয়েছে। এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ২৩১ জন সংসদ সদস্য ৬৪ ঘণ্টা ৮ মিনিট আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া এ অধিবেশনে প্রাপ্ত মোট ১৭টি বিলের মধ্যে ১০টি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭।

সর্বশেষ খবর