সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় পুলিশ প্রধানদের সম্মেলন

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, অর্গানাইজ ও সাইবার ক্রাইম দমনের লক্ষ্য

ভার্চুয়াল জগতে জঙ্গিদের আনাগোনা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, অর্গানাইজ ও সাইবার ক্রাইম দমনের লক্ষ্য

আন্তদেশীয় অপরাধ দমনে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল মি. জুরগেন স্টক —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল জর্গেন স্টোক বলেন, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের ডাটাবেজ তৈরি করেছে ইন্টারপোল। এ বিষয়ে ১৯০টি দেশের সঙ্গে ইন্টারপোলের যোগাযোগ চলছে। পর্যায়ক্রমে সব দেশের সন্ত্রাসীদের ডাটাবেজ তৈরি  করবে ইন্টারপোল। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন ইন্টারপোল সেক্রেটারি। স্টোক বলেন, সাইবার ক্রাইমসহ এখন যেসব অপরাধ হচ্ছে আগে সেসব অপরাধ ছিল না। সন্ত্রাসীরা এখন উন্নত ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ বিষয়কে মাথায় রেখেই কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, সাইবার ক্রাইম এবং অর্গানাইজড ক্রাইমকে নিয়ন্ত্রণই এ কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশা?নের হ?লি আর্টিজা?নের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে ইন্টারপোল সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেও এ দেশের পুলিশ সফলতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। এ দেশের সরকার এবং পুলিশকে ইন্টারপোল যে ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। হ?লি আর্টিজা?নের হামলার পর ইন্টারপোল তথ্য দিয়ে বাংলা দেশকে সহযোগিতা করেছে বলে জানান তিনি। অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইন্টারপোল কারও কারও বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ইন্টারপোল সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, কোনো দেশের সরকার যখন সংশ্লিষ্ট দেশের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট বা নোটিস জারি করার অনুরোধ জানায় তখন ইান্টারপোল বিষয়টি প্রাথমিকভাবে যাচাই করে। এরপর পদক্ষেপ নেয়। এরপরও যদি বিষয়টি নিয়ে কেউ রিভিউ করার আবেদন করে তখন তা গ্রহণ করা হয়। রিভিউতে যদি প্রমাণিত হয় যে, কোনো রাজনৈতিক মোটিভ নিয়ে ইন্টারপোলকে নোটিস জারির অনুরোধ করা হয়েছে তখন ওই নোটিসটি অকার্যকর করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এক দেশের অস্ত্র ও জ?ঙ্গি অন্য দেশের মানুষ হত্যায় ব্যবহূত হ?তে পারে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লড়াই করতে হবে। জঙ্গিদের ‘ভার্চুয়াল’ উপস্থিতি থাকতে পা?রে। এই ভার্চুয়াল জগৎ কোনো সীমান্ত মানে না। জঙ্গিবাদ দমনে জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সমর্থন জানিয়েছে। বিশ্বের ১৪ দেশের পুলিশ প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ইন্টারপোল ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এ সম্মেলন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। তাই বিভিন্ন কমিউনিটি এবং ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে নিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করা হচ্ছে। শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বাংলাদেশ সরকারের কাজ নয়। প্রতিবেশী কোনো দেশেও যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন না, আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ আঞ্চলিক বা কোনো একটি দেশের একক সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্যেই চিফ অব পুলিশ কনফারেন্সের আয়োজন। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে। সম্মেলনে ফেসবুক প্রতিনিধিকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিরা প্রচার প্রচারণা চালায়। এ প্রচারণা বন্ধে করণীয় সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। এ নিয়ে ফেসবুক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করা হবে। সম্মেলনে উপস্থিত এফবিআই ও আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশের প্রতিনিধির কাছেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতা চাইবে। এ ছাড়া সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পুলিশের করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।

সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের পুলিশ প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ১৪ দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও ইন্টারপোল, ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের আইজিসিআই, আসিয়ানপোল প্রভৃতি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ ৫৮ জন বিদেশি অংশগ্রহণ করছেন। তিন দিনের এ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে আছে জঙ্গি দমন, মানব পাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান। সম্মেলনের শেষ দিন ১৪ মার্চ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষর হবে। সম্মেলন উদ্বোধনের পর রবিবার দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অন্যটি উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোহাস গুনারত্ন।

জঙ্গিদের ভার্চুয়াল জগতে উপস্থিতি থাকতে পারে—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এখন শুধু নিজের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই যথেষ্ট নয়, জঙ্গিদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাক?তে পারে। এই ভার্চুয়াল জগৎ কোনো সীমান্ত মানে না। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ১৪ দেশের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লড়াই করতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সমর্থন জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। তাই বিভিন্ন কমিউনিটি এবং ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে নিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করা হচ্ছে। শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বাংলাদেশ সরকারের কাজ নয়, প্রতিবেশী কোনো দেশেও যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন না, আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে।

সর্বশেষ খবর