শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্নফাঁস তদন্তে বিচার ও প্রশাসনিক কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশ্নফাঁস তদন্তে বিচার ও প্রশাসনিক কমিটি

এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্ত ও সমাধানে বিচারিক এবং প্রশাসনিক দুটি কমিটি গঠন করেছে হাই কোর্ট। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রশাসনিক কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক কমিটি গঠন করেছে আদালত। একটি রিটের শুনানি শেষে গতকাল হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটি কাজ শুরু করবে এবং কাজ শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। শুনানিতে আদালত বলেছে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস যে মহামারী আকার ধারণ করেছে, তা মাদকাসক্তির চেয়েও বড় ব্যাপার। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক কমিটির কাজ হবে প্রশ্নফাঁসে কারা জড়িত, কীভাবে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে, কার কার মাধ্যমে, কোন কোন মাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে তা চিহ্নিত করা এবং সে ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলে তা কী বা কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে বিষয়ে এই কমিটি পরামর্শ দেবে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে এ কমিটিতে থাকবেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে ডেপুটি সেক্রেটারি। এ ছাড়া প্রশ্নফাঁস কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, এ বিষয়ে কী পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত, পাবলিক পরীক্ষায় ভবিষ্যতে যেন আর প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে প্রশাসনিক কমিটি। বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সোহেল রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), কম্পিউটার সোসাইটির একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকাসহ কয়েকজন আইনজীবী চলমান এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া, ফাঁসের ঘটনায় বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে দণ্ড আরোপে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালতের রুল জারির বিষয়ে আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলেন, রুলে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, আইন সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএলের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট আবেদনকারী মাহমুদুর রাজি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস যে মহামারী আকার ধারণ করেছে, তা মাদকাসক্তির চেয়েও বড় ব্যাপার বলে আদালত শুনানিতে মন্তব্য করেছে। আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মধ্যে সব বিষয়েরই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস রোধ সম্ভব নয় : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, আমাদের নতুন এমন কোনো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে যেতে হবে, সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ থাকবে না। বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। নানা চেষ্টার পরও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে না পারায় এভাবেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন সচিব। সোবরাব হোসাইন আরও বলেন, এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যা আমরা প্রয়োগ করিনি। কিন্তু কোনো পদ্ধতিতেই প্রশ্নফাঁস রোধ করা যাচ্ছে না। বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

শিক্ষা সচিব বলেন, প্রশ্নপত্র তৈরি করা থেকে বিতরণ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনো একজন যদি অসৎ কাজ করে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে গোটা প্রক্রিয়াটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞের মধ্যে কোথাও না কোথাও একটু ব্যত্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থেকে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আগামী বছর থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। অনেকে স্বীকারও করছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এরপর প্রতিটি পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে।

সর্বশেষ খবর