মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুদ কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

ব্যাংক ঋণের টাকা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে

মানিক মুনতাসির ও আলী রিয়াজ

ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকার একটা বড় অংশ শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ না করে অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে একদিকে ব্যাংক ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বেশি হওয়ায় সরকারের ব্যয় বাড়ছে। যা বাজেট ঘাটতি বাড়ানোর পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বার্থে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো উচিত বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি শুরু হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা কমানো হয়নি। এর আগে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির নেতারাও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এদিকে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদ কমানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার সমন্বয় করা এখন জরুরি বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, কম সুদে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে সরকারকে বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। ফলে সরকারের দায়ও বাড়ছে। বাজেটে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা জরুরি।

জানা গেছে, অনেকেই ব্যাংক থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ নিয়ে তার একটা বড় অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন অধিক মুনাফার লোভে। কেননা ব্যাংকে বর্তমানে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ। আর সঞ্চয়পত্রের সুদ হার সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। যা ব্যাংকের সুদের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ। অধিক মুনাফার আশায় তারা সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগ করবেন। আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে গিয়ে বেশি পরিমাণে সুদ দিতে হবে। এতে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমিয়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেবে। আবার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলেও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র প্রকল্পের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ২৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। যা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত ২০১৭-১৮ অর্থবাজেটে ৪৪ হাজার কোটি টাকায় বাড়ানো হলেও অর্থবছর শেষে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়।  জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ কার্যকর রয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয়ের কথা বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা রাখতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ বেশি হওয়ায় সরকারকে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এটা কমিয়ে আনা দরকার। আমরা আশা করি, যেহেতু ব্যাংক সুদের হার কমেছে এটাও না কমানোর কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ নিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন সঞ্চয়পত্রের সুদ নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে যে সুদ হার তা অনেক বেশি বলে আমরা মনে করি। যেহেতু ব্যাংক সুদের হার কমানো হয়েছে এটাও একটি সীমায় নিয়ে আসা উচিত। যদিও সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা রয়েছে তবুও সুদ হার বেশি থাকা উচিত নয়। আমরা মনে করি দ্রুত এটা সমন্বয় করা উচিত। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ হার অনেক বেশি। ব্যাংকাররা বলছেন ব্যাংক সুদ হার নিয়ন্ত্রণে আনতে বড় বাধা সঞ্চয়পত্রের সুদ। কারণ টাকা অন্য খাতে চলে যায়। ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে সাড়ে ১১ শতাংশে সঞ্চয়পত্র কেনে। এ ছাড়া এফডিআর সুদ হার যদি ৬ শতাংশ হয় কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে আসবে না। সরকারের একটি বড় দায় হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। সুদ পরিশোধের বড় অংশ চলে যায় সঞ্চয়পত্রে। দীর্ঘদিন থেকে কথা হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো হবে কিন্তু আমরা এর কোনো প্রতিফলন দেখছি না। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সব ধরনের সুদ হার একটি সামঞ্জস্য পর্যায়ে নিয়ে আসা হোক।

সর্বশেষ খবর