শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা নির্যাতন তদন্তের অধিকার আছে আইসিসির প্রত্যাখ্যান মিয়ানমারের

প্রতিদিন ডেস্ক

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বার গতকাল তাদের রায়ে বলেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী  অপরাধ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (আইসিসি) রয়েছে। এদিকে মিয়ানমার সরকার শুক্রবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থাটির মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালাবার কোনো এখতিয়ার নেই। সূত্র : বিবিসি। এ রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে আদালত জানিয়েছে, এ ধরনের তদন্ত একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে তা তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কিনা?

বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির নেই-মিয়ানমার : রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকার শুক্রবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থাটির মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালাবার কোনো এখতিয়ার নেই। রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হলেও বাংলাদেশ সংস্থাটির সদস্য। এর ভিত্তিতেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালানো সম্ভব বলে রায় দিয়েছে আদালত। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের দফতর থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়া এবং প্রশ্নবিদ্ধ আইনি ভিত্তির ওপর’ দাঁড়িয়ে আছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আমলে নেওয়া অভিযোগ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যার সঙ্গে আইনি যুক্তি-তর্কের কোনো সম্পর্ক নেই।

রাখাইনে যাদের নির্দেশে সংঘটিত হয়েছিল জাতিগত নিধনযজ্ঞ : রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী ১৩ জন মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত ২৭ জুন ‘মিয়ানমার : উই উইল ডেস্ট্রয় এভরিথিং’ শীর্ষক ১৮৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। প্রতিবেদনে নিধনযজ্ঞের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। ১৩ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। এক তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি জানায়, তারা বিশ্বাসযোগ্য অনেক আলামত পেয়েছে, যার মাধ্যম প্রমাণিত হয়, সেনা কর্মকর্তারা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তারা ৪০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। অ্যামনেস্টি জানায়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাংয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ৩৩ ও ৯৯ ব্যাটালিয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি জড়িত ছিলেন।

বার্মিজ অনুবাদ বন্ধ করল ফেসবুক : ফেসবুক অন্য ভাষা থেকে বার্মিজ ভাষায় অনুবাদের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা ও মন্তব্য ঠেকানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি এ উদ্যোগ নিল। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে গণহত্যা ও নিপীড়ন নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ভাষায় লেখালেখি হয়। মিয়ানমারে সেই লেখা বার্মিজ ভাষায় অনুবাদ করে রোহিঙ্গাবিরোধী মন্তব্য করা হচ্ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। ফেসবুকের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, গত ২৮ আগস্ট ফেসবুকে বার্মিজ অনুবাদের ব্যবস্থাটি বন্ধ করে দিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতামত তাদের এ উদ্যোগ নিতে ভূমিকা রেখেছে।

 ফেসবুক মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা অনুবাদের মানোন্নয়নে কাজ করছি। সে পর্যন্ত মিয়ানমারে অনুবাদের ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে। রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের বার্মিজ ভাষা ব্যাখ্যা করা নিয়ে ফেসবুকের সমস্যা ছিল। অন্য ভাষার অনেক বাক্য সেখানে ভুল অনুবাদ হতো।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহার করে মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সংঘাত, হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানোর অনেক নজির আছে। সেখানে ফেসবুকে অনেকে রোহিঙ্গা ও অন্য মুসলমানদের সম্পর্কে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে।

গত ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী দল মিয়ানমারে গণহত্যার তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি রোহিঙ্গাবিরোধী বিদ্বেষ ও সহিংসতা ছড়ানোর ক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা তুলে ধরে। সেদিনই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ মুছে ফেলে।

জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী দল তাদের প্রতিবেদনে ফেসবুকের ভূমিকাও তদন্তের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের সদ্য বিদায়ী মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান যায়িদ রাদ আল হুসেইন সতর্ক করে বলেছেন, বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সম্মুখীন করা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর