শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংকট বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু

ব্যয় বহনে হিমশিম সরকার, ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিত

মানিক মুনতাসির

মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে মৃত্যুভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সংকট বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে। প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা থেকে অনুদান পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থ। ফলে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ৩০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ জাতীয় বাজেট থেকে মেটাতে হচ্ছে সরকারকে। অন্যদিকে কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষায় ভাসানচরে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর এবং খোদ রোহিঙ্গা নাগরিকরা। এতে ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণে সরকার যে অর্থ ব্যয় করেছে তা অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত পাঠাতে না পারলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির এলাকাগুলোতে এক ধরনের সামাজিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের শতভাগ ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের জাতীয় বাজেট থেকেও অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। যা আমাদের জন্য অনাকাক্সিক্ষত ব্যয়।  ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি শিশু জন্ম দিচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা। ফলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ১১ লাখ হলেও প্রতিদিনই তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে কয়েক বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রকৃত বাংলাদেশিদের সংখ্যার সমান হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা ওই এলাকার সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার জনসংখ্যা ২২ লাখ ৮৯ হাজার।  এদিকে, রোহিঙ্গা খাতের বিপুল পরিমাণ প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলোর সহায়তা আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি মনে করে বলপূর্বক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে মিয়ানমার সরকার মূলত বাংলাদেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ জন্য নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশকে জোর আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  রোহিঙ্গা খাতের ব্যয় মেটাতে বিশ্বাবাসীকে নিয়ে বিশ্বব্যাংক এক বছর আগে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দিলেও এর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত বছর মে মাসে ম্যানিলায় এডিবির বার্ষিক সভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে সে ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এডিবি। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন খাতে। এ তিন খাতে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার বাইরে জাতীয় বাজেট থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। ট্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান কতটা সম্ভব হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশে সংকট বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর