বুধবার, ৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব হুমকিতে ২০ দল

জোট ছাড়লেন পার্থ । হুমকি লেবার পার্টির । বিএনপির ওপর বিরক্ত অন্য শরিকরাও

মাহমুদ আজহার

জোটকে না জানিয়ে চার এমপির শপথ গ্রহণ, অবজ্ঞা-অবহেলা, অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়াসহ নানা কারণে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। এরই মধ্যে জোট ছেড়েছে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। হুমকি দিয়েছে জোটের শরিক দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেছেন, ‘২৩ মে’র মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২০ দলে থাকব না।’ জোটের অন্যতম বড় শরিক জামায়াত নিজেই সংকটে। সংস্কারপন্থিদের নিয়ে বেকায়দায় এ দলটি। তারাও এখন বিএনপি নিয়ে ভাবছে না বলে জানা গেছে।

নানা কারণে বিএনপির ওপর বিরক্ত জোটের শরিক দল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশসহ অন্য দলগুলো। শিগগিরই বিএনপি কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিলে ২০-দলীয় জোটে বিদ্রোহের শঙ্কা রয়েছে। এতে বিএনপিকে সবাই ছেড়ে চলে যেতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোটের নেতাদের মধ্যে মান অভিমান বা কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। খুব শিগগিরই জোটের বৈঠক হবে আশা করছি। সব ভুল দূর হবে।’ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের চার এমপির শপথকে ঘিরে দলের ভিতরেই সংকটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়, যাতে দল ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেকটা বাধ্য হয়েই চার এমপির শপথে রাজি হন। তবে দলের ভিতরকার সংকট এখনো কাটেনি। এসব কারণে ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো বৈঠকও করতে পারেনি দলটি। এমনকি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীয় ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও চার এমপির শপথের বিষয়ে জানতেন না।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ২০-দলীয় জোটে চরম সংকট চলছে। শরিক দলের নেতাদের অভিযোগ, জোটের বৈঠকে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত হয় না। মিটিং হয় নামে মাত্র। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সব সিদ্ধান্ত হয় সেখানেই। সবকিছুতেই ঐক্যফ্রন্টকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোনো কর্মসূচিও জোটের বৈঠকে হয় না। অথচ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোটকে সামনে চায় বিএনপি।

সূত্রমতে, দীর্ঘদিনের ক্ষোভের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বিএনপির একক সিদ্ধান্তে তাদের পাঁচ নেতার শপথ। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জোটের সঙ্গে আলোচনা না করায় তাদের ক্ষোভটা তীব্র হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ২০ দল নির্বাচনী জোট। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের মতামত নেওয়া হলেও এমপিদের শপথ নেওয়ার আগে তাদের মতামত জানার প্রয়োজনই মনে করা হয়নি। তাছাড়া ২০-দলীয় জোটের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, এ সরকার ও সংসদকে বৈধতা না দেওয়া। বিএনপি কয়েকদিন আগেও সেই সিদ্ধান্তেই ছিল। হঠাৎই তাদের পুরোপুরি ইউটার্নে চরম ক্ষুব্ধ হন জোটের শরিক দলের নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কখনো কখনো মতের বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু এটা খুবই সাময়িক। এটা আবার ঠিক হয়ে যাবে। যারা ২০ দলে আছেন তাদের কেউ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ের বিরুদ্ধে না। দেশ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে ২০ দলের সবাই এক।’

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এতদিন শরিক দলগুলোর অভিযোগ ও ক্ষোভ আমলে না নিলেও পার্থ সরে যাওয়ার পর বিরোধ কমাতে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি নীতিনির্ধারকেরা। এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পার্থের সঙ্গে গতকালই কথা বলেছেন। খুব শিগগিরই জোটের বৈঠক ডাকা হবে। পার্থকেও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানা গেছে। জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর-প্রতীক বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের শপথের আগে ২০ দলের নেতারা অন্তত আমি নিশ্চিতভাবে এ প্রসঙ্গে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানি না। গণমাধ্যমের সুবাদে জানতে পারলাম, বিএনপির অতি শীর্ষ নেতারাও জানতেন না। এ দিকে জোটের শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বেড়েই চলেছে। দুই দলের কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। বিএনপির ভিতর থেকে জামায়াত ছাড়তে ব্যাপক চাপ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যান্য শরিকও অসন্তুষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাদের আলোচনায় জোট ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের গুরুত্ব অনুধাবন করে সেই পথে হাঁটাকেও বিপজ্জনক মনে করছেন নেতারা। তবে জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতাদের দু-একজন ছাড়া সবাই এ বিষয়ে একমত বলে জানা গেছে।  বিএনপির কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ক্ষুব্ধ এলডিপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, পার্থ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, ২০ দলের কার্যকারিতা এখন আর নেই। বৈঠক হয় না, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোট শরিকদের মতামত নেওয়া হয় না। তাহলে এই জোটের কাজ কী? আমাদের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দেশে ফেরার পর এলডিপিও সিদ্ধান্ত নেবে। জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও বিএনপির সাম্প্রতিক আচরণে চরম ক্ষুব্ধ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর জোটের দুটি বৈঠক হয়। তাও বিএনপি আগেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু জোটের বৈঠকে জানিয়ে দেয়। এটাকে ভালোভাবে দেখেন না শরিকরা। তাই আন্দালিভ রহমান পার্থের জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তে শরিক দলের অনেকেই একমত ছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট গঠন ইস্যুতে তাদের সঙ্গে প্রথম থেকেই বিএনপির দূরত্ব বাড়তে থাকে। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএনপি জোটের মতামতকে গুরুত্ব দেননি বলেও তাদের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও জোটের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ‘অবজ্ঞা’ করেন বলেও বিভিন্ন সময় বলে আসছেন তারা। কিন্তু বিরোধ নিরসনে বিএনপি থেকে কোনো উদ্যোগ তো নেওয়া হয়নি। ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘২৩ মে’র মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২০ দল ছাড়তে বাধ্য হব। ঐক্যফ্রন্ট তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের এজেন্ডা নিয়েই তারা কাজ করছেন। এ কারণে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়তে হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর