বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

পদ রক্ষায় লবিং তদবিরে সেই অভিযুক্তরা

উপজেলায় বিদ্রোহী ও মদদদাতা

রফিকুল ইসলাম রনি

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকাবিরোধী নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের সাংগঠনিক শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা শাস্তিযোগ্যদের তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলীয় পদ হারানো ও বহিষ্কার ঠেকাতে অভিযুক্তরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযুক্ত অনেক তৃণমূল নেতা এখন ঢাকায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাসাবাড়ি ও অফিসে ধরনা দিচ্ছেন তারা। নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে তারা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন। গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়সহ শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত অফিসে এমন চিত্র দেখা যায়। জানা গেছে, উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে গত ছয় মাসে আট শতাধিক নির্বাচন হয়েছে। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ফলে অধিকাংশ স্থানেই নৌকার প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী হয়েছিলেন নিজ দলের পদধারী নেতারা। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ থেকে ও স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের ইন্ধনে তারা দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে লড়েছেন। ১৪৩ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে নিজ দলের বিদ্রোহীদের কাছে। এসব নির্বাচনে সহস্রাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ও মদদদাতা চিহ্নিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের শাস্তির আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। এখন চলছে তালিকা তৈরির কাজ। আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ তালিকা তৈরি করছেন। এ কাজ প্রায় শেষের দিকে। ২১ জুলাই দলের সম্পাদকম লীর বৈঠকে নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হবে। ওইদিন থেকে চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা দলের পদ-পদবি থাকার পরও উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের আমরা চিহ্নিত করছি। তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। একই সঙ্গে যারা বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন তাদেরও তালিকা করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের নামে চিঠি পাঠানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘দল করতে হলে দলীয় শৃঙ্খলা মানতে হবে। যারাই শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এখন থেকে শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। সে কারণেই দলীয় সভানেত্রী সিরিয়াস অ্যাকশনে যেতে বলেছেন।

অভিযুক্তরা যতই লবিং-তদবির করুক কোনো রক্ষা নেই।’ আওয়ামী লীগের সম্পাদকম লীর দুজন সদস্য জানান, ইতিমধ্যে সহস্রাধিক অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়নে দলের শীর্ষ পদে ছিলেন কিংবা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ছিলেন এমন ব্যক্তিই বেশি। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ও সরাসরি কাজ করেছেন প্রায় ২০ জন দলীয় এমপি। এর মধ্যে একজন সিনিয়র মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলায় নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী হয়েছিলেন ওবায়দুর রহমান খান। তিনি স্থানীয় এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই। ভাইকে বিজয়ী করতে মন্ত্রী নিজেও নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। দল বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে ওবায়দুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমাকে বিদ্রোহী কেন লেখেন? আমি নির্বাচনের আগে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার নিজ বাসায় সাক্ষাৎ করেছি। দেখা করেছি জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গেও। কেউ আমাকে নির্বাচন করতে মানা করেননি। এখন বিদ্রোহী কেন বলছেন? তখন তো কেউ বাধা দেননি।’ সম্পাদকম লীর একজন সদস্য বলেন, ‘সোমবার গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেছেন। তালিকা থেকে বাদ পড়তে তারা নানাভাবে তদবির-লবিং শুরু করেছেন। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য বা দলীয় এমপিরাও আমাদের সঙ্গে হাই-হ্যালো করছেন।’

সর্বশেষ খবর