আমি যা জানি, অন্যে জানে না। বহুদিন আগের কথা। আমিও তখন তরুণ, এরশাদও। একদিন পুরনো যমুনার ফেরিঘাটে তার গাড়ি উঠে গেছে। উনি দেখলেন আমার ব্ল্যাক মরিস মাইনার উঠতে পারেনি। নির্দেশ দিলেন আমার গাড়ি উঠাতে। তারপর তার সঙ্গে দুই ঘণ্টা। বললেন, আমি উত্তরবঙ্গের নেতা হতে চাই। আর কেউ নেই। তুমি আমাকে কী উপদেশ দেবে এক্ষুনি দাও। তার টিফিন ক্যারিয়ারে অনেক খাবার। সব উজাড় করে দিলেন, এর মধ্যে প্রিয় পাখির গোশত ছিল। উনি আমার একটি হাত নিজের হাতে রেখেছিলেন। বললাম, কী হতে চান? নেতা হতে চাই। বললাম, প্রথম কথা, মানুষের মাঝে নিজকে বিলিয়ে দিন। তা হলে নেতা হতে পারবেন। আমার কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। কোনোদিন এই গরিবের কথা ভোলেননি। প্রতিদিন মনে রেখেছেন। আমি তার জীবনে এত ইমপর্টেন্ট ব্যক্তি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এমন রাস্তা তৈরি করেছেন, যা একশ বছর কেউ ভুলবে না। তার নামই বলবে। ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ে গেছে। এটা উত্তরাঞ্চলে অকল্পনীয়। তিনি অসংখ্য দান করেছেন, যা কেউ জানে না। আর একজনও নাম মনে করতে পারি না, যিনি গোপন দান করেছেন। গোপন দান আল্লাহর সমস্ত রাগ পানি করে দেয়। আল্লাহ এতই রহমানের রহিম। তার পরিবারের সঙ্গে আমার পরিবারের যোগ আছে। আমার আত্মজীবনী, ‘জীবন নদীর উজানে’ [৪০০ পৃষ্ঠা]। পুরো তিন পৃষ্ঠায় তার পূর্ণ বিবরণী পাওয়া যাবে। এখানে লিখলাম না। একদিন আমাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে পেলেন। বললেন, মন খারাপ কেন? বললাম, আপনি আমার ভাইকে কুমিল্লায় বদলি করে দিয়েছেন। ওনার হার্টের অসুখ। নিজেই রান্না করে খান। তার কিছু হলে আমি আপনাকে দায়ী করব। উনি বললেন, এটা জুডিশিয়ারির এখতিয়ার। পর দিন ঢাকায় বদলি করে দিলেন। ভাইকে শ্রদ্ধা করতেন, ভয়ও করতেন। একদিন বললেন, তোমার ভাই আমার কঠোর সমালোচনা করেছেন সকালবেলা মর্নিং ওয়াকে। তার ইন্টিলিজেন্টস সাংঘাতিক। এবার আমার অভিনয়। বললাম, আমার ভাই ভীষণ সরল। তিনি আসলে কোচবিহারের লোক হিসেবে আপনাকে ভীষণ পছন্দ করেন। ওগুলো হিংসুকদের কথা। ওদের কথা শুনবেন না। আমার কথা শুনুন। উনি বিশ্বাস করলেন। একদিন ভাইকে ফোন করলেন। বললেন, খুব বেকায়দায় আছি। আমার ভাই তাকে পরামর্শ দিলেন। চার-পাঁচ দিন খাটলেন। এরশাদ ভদ্রলোকের মতো তার ফিস দিতে ভুললেন না। এতে তার অনেক লাভ হয়েছিল। বিভিন্ন সভায় মিলাদ হলে উনি আমার পাশে বসতেন। আমার হাতে হাত রাখতেন। আমার নাত এবং হামদ তার সবচেয়ে পছন্দ। একবার দিল্লিতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার দেখা। উনি বললেন, তুমি এখানে কী করছ? বললাম, গান গাইতে এসেছি কালি মন্দিরে। আপনি আসবেন? বললেন, আমার যেতে ইচ্ছে করছে। সবাই অবাক। সে দিন এলেন সাধারণ পোশাকে। আমার এক ঘণ্টার গান শুনেছেন। মাঝে মাঝে চোখে রুমাল। আব্বার গান তার পছন্দের ছিল। আমি উনাকে প্রথম রোটারির বড় সভায় প্রধান অতিথি করি। ওনার স্ত্রী আমাকে পছন্দ করতেন। উনিও ছিলেন। আমি তখন ঢাকা রোটারির প্রেসিডেন্ট। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? আমি সংগীত পরিষদের সভাপতি। আমার কিছু প্রয়োজন। তিনি চুল কাটছিলেন। বললেন, লোকে আমার সম্বন্ধে কী বলে? আমি যা বললাম সত্যি। কমিয়েও বলিনি, বাড়িয়েও বলিনি। আমার কাজ করেননি। একবার আমাকে বললেন তোমাকে ইরাকে পাঠাচ্ছি। বড় পীর সাহেবের দরগায় আমার কথা বল। আমাকে পাঠাননি। একবার আমাকে প্যারিসে পাঠাচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বললেন সেক্রেটারিকে। সেক্রেটারি আমার পছন্দের লোক। উনি কী যেন বললেন। আমার যাওয়া হলো না। তিনি কোনোদিন আমার কাজে আসেননি। কোনো লেন-দেন ছিল না। এতেই আমি ভালো ছিলাম। কারও অনুগ্রহ প্রার্থী নই। তাই বলে তাকে ভালোবাসা দি’ নি’? কোথায় যেন তাঁর জন্যে একফোঁটা অশ্রুজল জমা ছিল। তাই আজ বিসর্জন করলাম। দোষ খুঁজতে যাইনি। হয়তো আমার দোষ তার চেয়ে বেশি। ‘লাইলাহা ইল্লাআন্তা সোবহানাকা ইন্নিকুন্তু মিনাজজলেমিন’। কুরআনের কথা। মিথ্যা হতে পারে না। পৃথিবীতে সবচেয়ে জালিম আমি, অর্থাৎ জুলুমকারী আমিই। তিনি রোমান্টিক। কবি। তার তুলনা একমাত্র আমি। অনেক কবিরা তাকে ভালোবাসতেন। টাকার জন্যে নয়, অন্যকিছুর জন্যে নয়। রাত দুটোয় তিনি ফজল শাহাবুদ্দীনকে কবিতা শুনিয়েছেন। শামসুর রাহমানকেও শুনিয়েছেন। শামসুর রাহমান দু’পাত্র খেতেন। অনেক কবিই খায়। কবিতার খাতিরে এরা তার বন্ধুত্ব পেয়েছিলেন। একদিন ফেরদৌসীকে কী মনে করে দুই লাখ টাকা পাঠালেন। তখন তার ভীষণ অসুখ। কে যেন তাকে উসকাল ফেরদৌসী তো কোটিপতি। শুনে দুঃখিত হলো ফেরদৌসী। টাকা ফেরত। আল্লাহর কাছে অনেক শুকুর। আমরা কারও কাছে কিছু চাইনি। একদিন বারিধারা মসজিদে পেলাম, এই ছেলেটি কে? বললেন, আমার ছেলে। তারপর দিন থেকে ছেলেটি আমার এত নিকট হয়ে পড়ল যে আর কারও কাছে বসত না। আমি ওকে আদর করতাম বুকে জড়িয়ে। এ আদর অন্যকোথাও সে পাবে না। তার রক্তের সঙ্গে কোথাও আমার রক্ত মিশে আছে। আমার নাতি আলভীও তাকে ভালোবাসে। একদিন তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আলভী তাকে পা ছুঁয়ে সালাম করল। উনি জড়িয়ে ধরলেন আমার নাতি আলভীকে। আলভীও আপ্লুত। একদিন গুলশান ক্লাবে গান শুনতে গিয়েছি। আসমাও সঙ্গে। পেছনে এরশাদ এবং আরেক সুন্দরী। কিছুক্ষণ পর পর এরশাদ আমার সঙ্গে কথা বলবেন। শাহনাজের গান তার ভালো লাগে, তবে আমার মতো নয়। তার শিল্পী সাবিনা। সাবিনার গান শুরু হতেই উচ্চকিত হয়ে উঠলেন। এ যেন অন্য এরশাদ। বালক এরশাদ। রোমান্টিক এরশাদ। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’। এরশাদ তার জীবনের সব কটি জানালা খুলে দিলেন। আমি চিনলাম প্রেমিক এরশাদ, মানুষ এরশাদকে, রোমান্টিক এরশাদকে। মানুষ দোষে-গুণে। কিন্তু তার মতন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আর হবে না। এক মাসে রাস্তা। তিন মাসে ব্রিজ। তিন দিনে ইলেকট্রিসিটি। ভাবা যায়? যায় না।
শিরোনাম
- চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলায় ২০ জুলাই পরিবহণ ধর্মঘট
- ফেসবুক ও মোবাইল ব্যাংকিং হ্যাক করে চলত প্রতারণা, গ্রেফতার ৪
- শিক্ষার্থী সেবায় বাউবির সমন্বিত পরিকল্পনা
- ভালুকায় মা ও দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা: গ্রেফতার দেবর নজরুল
- নির্বাচন ঠেকানোর জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে : টুকু
- জুলাইয়ে নারীদের সাহসী উত্থান উদযাপনে ঢাকায় মশাল মিছিল
- বাংলাদেশিদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে মালয়েশিয়া
- মালয়েশিয়ায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ১১
- নীতি সুদহার কমিয়ে ৮ শতাংশ করলো বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঢামেক হাসপাতালের সামনে থেকে দুই দালাল আটক
- ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা: আসামি মহিন দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে
- সরকারি হলো আরও এক বিদ্যালয়
- মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ
- বিএনপি সংঘাতের উস্কানির ফাঁদে পা দেবে না : প্রিন্স
- পদত্যাগ করলেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী
- ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ রাজ্যের মামলা
- মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক
- শান্তির হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের জয়ের হ্যাটট্রিক
- ৮ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার দুয়ারে ডসন
- ট্রাম্পের আল্টিমেটামের তোয়াক্কা করে না রাশিয়া