শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রিয়া সাহা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংহতি নষ্ট করেছেন

গোলাম রাব্বানী

প্রিয়া সাহা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংহতি নষ্ট করেছেন

আবুল বারকাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা বিভ্রান্তিমূলক ও নীতিগর্হিত বক্তব্য দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেন, বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও তার ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকদের ক্ষতি করেছেন। সেইসঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংহতি নষ্ট করেছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি তার গবেষণার নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক বারকাত বলেন, প্রিয়া সাহা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পত্র-পত্রিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার নাম উল্লেখপূর্বক কিছু তথ্য-উপাত্ত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন-বিষয়টি আমার নজরে এসেছে।

অধ্যাপক বারকাত বলেন,  ‘(এক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রিয়া সাহা বলেছেন যে, বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। এর পরে ভিডিও-সাক্ষাৎকারে তিনি আমার নাম উল্লেখ করে বলেছেন যে : উল্লিখিত পরিসংখ্যান আমার গবেষণা উদ্ভূত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মিলে যায় (অথবা একই)। তিনি এও বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। (দুই) ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম যার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত।

তিনি বলেন, এই বক্তব্যের সঙ্গে আমার গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের কোনোই মিল নেই। আমার গবেষণায় যা আছে তা হলো নিম্নরূপ : (১) “আমার হিসেবে প্রায় পাঁচ দশকে (১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত) আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন” (উৎস : আবুল বারকাত, ২০১৬, বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি, পৃ:৭১)। অর্থাৎ আমি কোথাও “৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন”-এ কথা বলিনি। উপরন্তু তিনি কোথাও বললেন না যে আমার গবেষণা তথ্যটির সময়কাল ৫০ বছর-১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। (২) প্রিয়া সাহা কখনো আমার সহ-গবেষক, গবেষণা সহযোগী অথবা গবেষণা সহকারী ছিলেন না।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করেছেন। তার সদিচ্ছার কারণেই এটা হয়েছে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জমি-জমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। কেননা আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ করার বিষয়টি ছিল। প্রধানমন্ত্রী তা করেছেন। দীর্ঘ ৫০-৬০ বছরের পুঞ্জীভূত এই সমস্যার সমাধান আদৌ সহজসাধ্য কোনো কাজ নয়। তবে প্রিয়া সাহা যা করলেন-তাতে অধ্যাপক আবুল বারকাত মনে করেন এই কাজটি জটিলতর করলেন। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংহতির পথে বাধা সৃষ্টি করলেন।  তিনি বলেন, বিগত ১০০ বছরের (১৯০১-২০০১) আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের আনুপাতিক হার আদৌ কমেনি, একইসময়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর হার বেড়েছে প্রধানত দুটি কারণে :- (১) ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ, (২) তুলনামূলক উচ্চ প্রজনন হার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর তুলনামূলক সংখ্যা কমেছে প্রধানত তিনটি কারণে (১) দেশবিভাগ, (২) ১৯৬৫ পাক-ভারত যুদ্ধ এবং সমসাময়িককালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, (৩) শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি। তিনি বলেন, শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের অধীনে বেদখলের ঘটনার ৫৩ শতাংশ এবং মোট বেদখলকৃত জমির প্রায় ৭৪ শতাংশ ঘটেছে পাকিস্তান আমলে (১৯৬৫-১৯৭০), বাদ বাকি ঘটনার এবং বেদখলকৃত জমির বড় অংশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তীকালে সামরিক স্বৈরশাসকদের আমলে। তিনি বলেন, একজন সমাজ গবেষক হিসেবে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে প্রিয়া সাহা আমার নাম উল্লেখপূর্বক যেসব বিভ্রান্তিমূলক ও নীতিগর্হিত বক্তব্য দিয়েছেন তিনি অতি দ্রুত তা প্রত্যাহার করবেন।

সর্বশেষ খবর