সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই অপরাধী : প্রধানমন্ত্রী

কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই অপরাধী : প্রধানমন্ত্রী

ঘুষদাতা ও গ্রহীতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে ঘুষ নেবে তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতে হবেই, আর যে দেবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যে ঘুষ খাবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। এখানে যদি ব্যবস্থা নিতে পারি এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে অনেক কাজ দ্রুত করতে পারব।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহা পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।      

সম্পদের প্রতি মানুষের লোভের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের তো সীমা আছে। সম্পদের পেছনে অন্ধের মতো ছুটে বেড়ানো আর নিজের সবকিছু নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। মানুষের আয় বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। উন্নয়ন কর্মকা  ও অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়েছে। কে কত আয় করল, কে কত খরচ করল তারও একটা হিসাব থাকা উচিত। বিশেষ করে, বড় ধরনের খরচের। কে কোন খাতে, কোন উদ্দেশ্যে খরচ করছে, তার সেই আয়ের উৎস কী, এর হিসাব রাখা প্রয়োজন। মানুষ আসলে অন্ধ হয়ে যায় অর্থের জন্য। কিন্তু এটা ভুলে যায় যে মরে গেলে কিছু সঙ্গে নেওয়া যাবে না, কবরে একাই যেতে হবে। যা রেখে যাবে তা আর কোনো দিন কাজে লাগবে না। আর যদি বেশি রেখে যায় তবে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তা নিয়ে মারামারি-কাটাকাটি শুরু হয়ে যাবে। যেটা এখন যথেষ্ট দেখা যায়। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যথেষ্ট সক্রিয় আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। যেহেতু আমাদের একটা ভালো সেটআপ আছে তাই এই দফতর থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে নজরদারি করা দরকার, যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে, আমাদের অর্জনগুলো আমরা ধরে রাখতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে, যাতে এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি এলাকায় খোঁজ নেওয়া দরকার। কোনো এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা ঘরে ফিরে যেতে চায় তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর ওপর সার্ভে করেছিলাম। এ কাজগুলো আবার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘শান্তি নিবাস’ এবং ‘অবসর’ কর্মসূচিও পুনরায় চালু করব। দেশে ডেঙ্গু সমস্যা সম্পর্কে দেশবাসীকে আরও সচেতন থাকার এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার শুধু আমাদের দেশেই নয়, আশপাশের অনেক দেশেই ডেঙ্গু দেখা গেছে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। যেমন ফিলিপাইনে মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, নিজের ঘরবাড়ি এবং কর্মস্থলের চারপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। যাতে কোথাও পানি জমে এ রোগ সৃষ্টিকারী লার্ভা জন্মাতে না পারে। এখনো এ রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবার সঙ্গে মিশতে চাই, জানতে এবং কাজ করতে চাই। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনো মানি না, মানতেও চাই না। তিনি বলেন, আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা। কাজেই সেই হিসেবে, মনে করি দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করব, যাতে দেশের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়।   প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শুরুতে সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শোকের মাস এই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবার-পরিজন হারিয়ে এবং শোক ও ব্যথা নিয়ে জাতির পিতার আকাক্সক্ষা পূরণের জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান এবং ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সর্বশেষ খবর