শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশের মানুষ অসহায় জীবন যাপন করেছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন কিছু কাজ করেছি, যা মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে। এরপর আট বছর বাদে আবার ক্ষমতায় আসার পর গত এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এডিবির রিপোর্ট অনুযায়ী এশিয়ায় আমরা এখন ১৩তম অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম। বিশ্বে আমরা ৩০তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছি। ইনশা আল্লাহ আরও পারব। সারা বিশ্বে আমরা অবস্থান করে নিয়েছি। আমরা এখন ৮ দশমিক ১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাত্র ১০ বছরে এই অর্জনগুলো করতে পেরেছি। কারণ আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের কল্যাণে কাজ করেছি।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে গতকাল সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি অনেকেই পছন্দ করতে পারে না। পঁচাত্তরে যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল, তারা এখনো চক্রান্ত করে যাচ্ছে, করেই যাবে। কিন্তু সব চক্রান্ত মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজকে প্রতিটি ধর্মের মানুষ নিজ নিজ অধিকার নিয়ে সুন্দরভাবে বসবাস করছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে হচ্ছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা দিনরাত পরিশ্রম করে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। অথচ বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে ২৬ জন পুলিশকে হত্যা করেছে। ৫০০ মানুষকে তারা পুড়িয়ে মেরেছে।

পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন  প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যাত্রীদের চাপ, যানবাহন চলাচলের গতি, সড়কের দৈর্ঘ্য, ডাস্ট ম্যানেজমেন্ট, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য গতকাল স্থপতিদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রত্যক্ষ করার সময় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বাসস। তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জনগণের সম্ভাব্য চাপ, যানবাহনের গতি, প্রকল্প এলাকাগুলোর সড়কের দৈর্ঘ্য ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও এ লক্ষ্যে পানি সংরক্ষণের জলাধার খননে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য স্থপতিদের প্রতি নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের জন্য টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে নতুন ভবনগুলোতে কিছুটা খোলা জায়গা, নেচারাল ভেন্টিলেশন, বারান্দা ও আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা নির্মাণাধীন বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ও ভবনগুলোতে যথাযথ বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর সব দিকের পরিবর্তে একদিকে স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ভবনগুলোর হোলসেল নির্মাণ বন্ধে আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে আরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করছে।’ প্রধানমন্ত্রীর সামনে যে প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হয় সেগুলো হলো-  সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির মধ্যে বহুতল ফ্ল্যাট ভবন নির্মাণের সংশোধিত মাস্টার প্ল্যান এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভার জন্য বড় পরিসর রেখে ২০তলা ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্প। অন্য দুটি প্রকল্প হচ্ছে- শেরেবাংলানগরে প্রকৌশলী লুই আইকানের স্থাপত্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৪৩ একর জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ এবং রাজধানীর হাতিরঝিলে ২০তলা বহুমুখী ভবন নির্মাণ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্থপতি বিভাগের সদ্য বিদায়ী স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস, স্থপতি বিভাগের সহকারী স্থপতি সৈয়দা শাকিলা বিনতে আলম পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর