একসময় যারা ফ্রিডম পার্টি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০০৯ সালের পর তারা দল বদল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগদান শুরু করেন। কেউ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, এমপি-মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতার হাতে ফুলের মালা দিয়ে ‘লীগ’ নেতা যুক্ত করেন নামের সঙ্গে। আবার সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদ-পদবিও বাগিয়ে নেন কেউ কেউ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি দলে ভিন্ন দলের নেতা-কর্মীর যোগদান বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঠিকাদার, চাঁদাবাজসহ এখন সবাই ‘লীগ’-এর সঙ্গী। কেউ সরাসরি দলের পদ-পদবিতে, কেউ কারও ছত্রচ্ছায়ায়। আর এসব অনুপ্রবেশকারীর মাশুল দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর রাজধানীতে অভিযান শুরু হয়। অভিযানের প্রথম দিনেই আটক হন যুবলীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। গতকাল বিকালে আটক করা হয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে। তারা দুজনই দলে অনুপ্রবেশকারী। ফ্রিডম মানিক ও ফ্রিডম রাসুর হাত ধরে উত্থান হয় অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার। ফ্রিডম পার্টির কর্মী খালেদ ছিলেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১২ সালে যুবলীগের মহানগরী কমিটিতে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর সবার জানা। একই অবস্থা বিপুল অর্থসহ আটক জি কে শামীমের ক্ষেত্রেও। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তৎকালীন যুবদল নেতা শামীম। তিনি যুবদলের সহসম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। দলের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দিতেন সব সময়। গতকাল আটক হওয়ার পর থেকে যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেছেন, জি কে শামীম যুবলীগের কেউ নন। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যার ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আগে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও হালে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছিলেন। জামায়াত নেতার অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়েই পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকে বলেছেন, ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে যোগদানকারীর সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা সরকারে রয়েছে, সেজন্য সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে লোকজন ভিড় করছে তাদের দলে। এই নব্যদের অনেকের নানা অপরাধের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আওয়ামী লীগে এখন হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, অনেকে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লোটে বদনাম করার জন্য, অনেকে চেহারা পাল্টে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে, তারা অনেক ক্ষেত্রে এসব হাইব্রিডের কারণে কোণঠাসা হয়ে আছে। দলীয় সূত্রমতে, অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরে বাইরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাদের হাইব্রিড, কাউয়াসহ নানা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এদের দল থেকে বাদ দেওয়া হবে, বের করা হবে বলে নানান হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়েছিল। দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদৌ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সরাসরি কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হবে না কিন্তু ধীরে ধীরে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে। তবে তা সময় ও পরিস্থিতিসাপেক্ষ। তবে এসব অনুপ্রবেশকারীর অপকর্মের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী এখন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।