শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তদন্তে নতুন মোড়

প্রথম স্বীকারোক্তি সকালের, অমিত সাহা গ্রেফতার আবরারের রুমমেট মিজান আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

তদন্তে নতুন মোড়

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে কীভাবে কতটুকু জড়িত ছিলেন, কত সময় ধরে চলা নির্যাতনে আবরারের মৃত্যু হয়েছে এবং নেপথ্য থেকে কেউ কলকাঠি নেড়েছেন কিনা এর অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন তারা। এরই মধ্যে গ্রেফতার একজন হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টিও আদালতে স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া গতকাল এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরা হলেন, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা ও এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র শিগগিরই দাখিল করা হবে। আমরা আশা করি, খুব শিগগির, খুব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট প্রদান করতে পারব। আমাদের পুলিশ এ কাজটি করছে, যাতে চার্জশিট নিখুঁত হয়, সব কিছু যেন নির্ভুল হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা দুষ্কৃতকারী, যারা এসব কা--কারখানা ঘটায়, রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সে বিষয়ে আমরা কঠিন এবং কঠোরতম। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেছেন, কোনো ইনফরমেশন কিংবা কোনো কিছু যদি থাকে কিংবা নাও থাকে- তাহলেও যেন প্রত্যেক ছাত্রাবাস তল্লাশির আওতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারেই কাজ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ‘টর্চার সেল’ ও ‘র‌্যাগিং’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমার মনে হয় বেশি রকম এ কালচারটা রয়েছে বুয়েটে। বুয়েটে আমরা এটা বেশি দেখেছি। কিছুটা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বেশি নেই আমার মনে হয়। এ কালচার থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো ভাটা পড়েনি, প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বুধবার) সুন্দরভাবে এক্সপ্লেইন করে দিয়েছেন। এরপর আমার আর কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, ইদানীংকালে তারা মাত্রার বাইরে চলে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে অ্যাকশন নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবরার হত্যার ঘটনায় সর্বশেষ তিনজনের গ্রেফতার প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহারে নাম না থাকলেও তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম দফায় গ্রেফতার হওয়া বুয়েটের ১০ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তারাও ওই হত্যাকান্ডে  জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে হয়তো অমিত শাহ উপস্থিত ছিল না। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আবরার হত্যায় তার প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষ দায়-দায়িত্ব রয়েছে। তদন্ত, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তা উঠে এসেছে। হত্যাকান্ডে র মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমাদেরও তদন্তের মূল বিষয়। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি, পরবর্তী তদন্তে যদি তা না মেলে তাই আমরা এখনই মোটিভ সম্পর্কে বলতে চাচ্ছি না।

গতকাল তিনজনকে গ্রেফতার নিয়ে এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তবে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আটক সাখাওয়াত ইকবাল অভিকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সবুজবাগ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিতকে গ্রেফতার করা হয়। বেলা ১২টার দিকে শেরেবাংলা হল থেকেই তার রুমমেট মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। মিজান বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মামলার ১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তোহা থাকতেন শেরেবাংলা হলের ২১১ নম্বর কক্ষে। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন, ডিএমপি সদর দফতরের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে স্বীকারোক্তি : আবরার হত্যা মামলার আসামি  ইফতি মোশারফ সকাল (২১) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ইফতি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাজবাড়ী সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফকির মোশারফ হোসেনের ছেলে। ইফতি শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর