শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বায়রার চিঠিতে বিস্মিত মালয়েশিয়ান সরকার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বায়রার চিঠিতে বিস্মিত মালয়েশিয়ান সরকার

এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা। বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের ঠিক আগে আগে দেওয়া এই চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে এতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সেই পুরনো প্রতারণা ও দালাল দৌরাত্ম্যের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার আবদার জানিয়েছে বায়রা। বায়রার নামে নজিরবিহীন এ ধরনের চিঠিতে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিস্ময় প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া সরকারও। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, শ্রমবাজার ইস্যুতে মালয়েশিয়া সরকারকে চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নেই বায়রার। শ্রমবাজার নিয়ে কথা হচ্ছে দুই দেশের সরকারের মধ্যে। বায়রা তো সরকার না। তিনি বলেন, বায়রা রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন। আমরা রিক্রুটিং এজেন্টদের সঙ্গে কাজ করছি। এ কারণে বায়রার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলতে চাই। কিন্তু আমাদের দায়দায়িত্ব তো দিয়ে দিতে পারি না। মন্ত্রী বলেন, ‘এই চিঠিকে গুরুত্ব দেবে না মালয়েশিয়া। তবে কেউ ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো কিছু করলে, দেশের ক্ষতি হতে পারে।

জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর মালয়েশিয়া সরকারের দুই মন্ত্রীকে চিঠি দেন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। চিঠিতে কর্মী নিতে মালয়েশিয়া সরকার যেই অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করছে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মতামত দেন। একই সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। ইংরেজিতে লেখা দুই পাতার চিঠিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসনের পদ্ধতি সমন্বয় করার লক্ষ্যে কতিপয় পন্থা গ্রহণ করেছে, যা বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন, তাই অন্তর্বর্তী সময়ে আমরা পুরনো পদ্ধতি চালু করার জন্য সুপারিশ করছি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের আলোচনার পর আবারও মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল দালালদের অপতৎপরতা। তাই এবার শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার নানা বিষয়ের সমাধান করে শ্রমবাজারটি চালু করতে আগামী ৬ নভেম্বর বৈঠক করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি যাচ্ছেন মালয়েশিয়ায়। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ভালো খবরের আশা করছেন মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। মন্ত্রী বারবারই বলে আসছেন, ‘যেহেতু কর্মী নেবে তারা, তাই শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বায়রা মহাসচিবের চিঠি সব ওলট-পালট করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চিঠিটি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং মালয়েশিয়া সরকার যা চাচ্ছে, এই চিঠি তার বিরোধিতা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বায়রার নির্বাহী কমিটিকেও জানানো হয়নি : বায়রার সদস্যদের নামে ভিন্ন একটি দেশের সরকারকে চিঠি পাঠানো হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বায়রার সাধারণ সদস্যরা। এমনকি বায়রার ২৭ সদস্যের নির্বাহী কমিটির সভাতেও বিষয়টি আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে বায়রার যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ১২ অক্টোবর বায়রার নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কমিটিতে আলোচনা না করে, সিদ্ধান্ত না নিয়ে মহাসচিব বায়রার নামে এমন চিঠি দিতে পারেন না বলেও মনে করেন তিনি। এই চিঠির ফলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বায়রার এ নেতা। মন্ত্রণালয় ও সরকারকে পাশ কাটিয়ে এই চিঠি দেওয়া মন্ত্রণালয়কে অবমাননা বলেও মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর