শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জেলায় জেলায় যাত্রী জিম্মি করে ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা সড়কে বাস চলা স্বাভাবিক হলেও কয়েকটি জেলায় গতকালও যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছেন। বাস বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দিনাজপুর, নওগাঁসহ কয়েকটি জেলায় বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। নেত্রকোনায় সীমিতসংখ্যক বাস চলেছে। অন্যদিকে তিন দিন পর শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহারে যানবাহনের চাপে বেনাপোল স্থলবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় অভ্যন্তরীণ সব রুটের বাস ধর্মঘট গতকাল সপ্তম দিনে গড়াল। বুধবার  জেলা প্রশাসকের সঙ্গে স্থানীয় বাস মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে দুঃসহ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে ২ শতাধিক বাস সারি করে রাখা। কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে নওগাঁ-ঢাকা বাস টার্মিনালের দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে থেকে নিয়মিত বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা বাস টার্মিনালে এস আর পরিবহন কাউন্টারের সামনে কথা হয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘অফিসের কাজে জরুরি ভিত্তিতে দুপুরের মধ্যে ঢাকা যাওয়া দরকার। অভ্যন্তরীণ রুটে বাস বন্ধ থাকায় ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে বাস টার্মিনালে এসেছি। এক সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট চলছে। এটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল! মানুষকে জিম্মি করে এ ধরনের আন্দোলন আর কত দিন চলবে?’

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতারা শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানানোর পরও শ্রমিকরা তা মানছেন না।’ নওগাঁ-ধামইরহাট রুটে দ্রুতি বাসের চালক রিপন সরদার বলেন, ‘আমরা চালকরা কেন্দ্রীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নেতার সিদ্ধান্তে বাস চালানো বন্ধ করিনি। তাই তাদের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মানব না। সরকার নতুন আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত আমরা বাস চালাব না।’

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকালও চলেনি দিনাজপুরে বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাস। অঘোষিত বাস ধর্মঘট চলায় চরম ভোগান্তির বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে দেশে ফেরা পাসপোর্ট যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এদিকে বিভিন্ন জেলায় বাস চলছে শুনে অনেকে সকালে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার উদ্দেশে টার্মিনালে এসে দেখেন বাস বন্ধ রয়েছে। পরে বিকল্প যানবাহনে ভোগান্তি আর বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যান তারা।

অন্যদিকে দিনাজপুরের হিলি থেকে হিলি-দিনাজপুর, হিলি-বগুড়া পথে বাস চলা বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা। তবে হিলি-ঢাকা, হিলি-জয়পুরহাট রুটে বাস চলছে। দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি জানান, এটি সংগঠনের সিদ্ধান্ত নয়। কিছু চালক নিজেরাই বাস চলা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকের পর বাস চলার ব্যাপারে বলা যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, গতকাল সকালে খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে যাত্রীবাহী বাস। স্বাভাবিক হয়ে আসছে সড়কের পরিবেশ। এদিকে টানা চার দিন পর বাস চলা শুরু হওয়ায় সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ী ও রয়্যাল হোটেল মোড়ের কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে বাস চলায় স্বস্তি এলেও দূর গন্তব্যের যাত্রীদের অনেকে টিকিট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় তিন দিন বন্ধ থাকার পর কেন্দ্রীয় ঘোষণায় গতকাল সকালে কিছু বাস চলা শুরু করেছে। তবে পুরোপুরি বাস চলা স্বাভাবিক হয়নি। অনেকেই বন্ধ জেনে হয়তো আসছেন না টার্মিনালে। যে কারণে যাত্রীরও ভিড় নেই। সকালে পারলা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে কিছু বাস যাত্রী তুলছে। তবে গেটলক বাস সার্ভিসগুলো এখনো চলা শুরু করেনি।

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর তীব্র যানজটে বেনাপোল স্থলবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে ও প্রধান সড়কের আশপাশের সড়কে যানজটে পথচারীসহ পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে হেঁটে চেকপোস্টে গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করতে আসা কয়েক শ ট্রাক একসঙ্গে বন্দরে প্রবেশ করায় ও ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য খালাস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬৮টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে এক দিনের রেকর্ড ২০ কোটি টাকা রাজস্ব জমা পড়েছে বেনাপোল সোনালী ব্যাংকে।

সর্বশেষ খবর