রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারীর ক্ষমতায়নে বিস্ময়কর রেকর্ড

শাবান মাহমুদ

নারীর ক্ষমতায়নে বিস্ময়কর রেকর্ড

নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিস্ময়কর নবজাগরণ ঘটেছে। ৩৯ বছর সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনে তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দলে থাকাকালীন সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে সাহসী নেতৃত্বের ভূমিকা যেমন রাখেন তেমনি ’৯০-উত্তর পঞ্চম সংসদে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসে সংসদীয় গণতন্ত্রে দেশের শাসন ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনে অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব দেন।

নারীর ক্ষমতায়নে তার ভূমিকার জন্য এ বছর মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শেখ হাসিনাকে লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন। বার্লিনে ৭ মার্চ সেখানকার রাষ্ট্রদূত এ পদক গ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি, গণতন্ত্র ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পর্যায়ের পদক প্রদান করে। বার্মার গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলে পশ্চিমা গণমাধ্যম তাকে ‘বিশ্ব মানবতার জননী’ বলে আখ্যায়িত করে। বিশ্ব রাজনীতিতে তার এই অবদানকে সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বের পরিচয় বলে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। সম্প্রতি বিশ্বনন্দিত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস বিশ্বের একশ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ২৯ নম্বর আলোকিত নেতা হিসেবে তাকে তুলে আনে। তার প্রথম শাসনামলে বিশ্বরাজনীতির আলোকিত কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত ও সুলেমান ডেমিরেলকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনায় দুই দশকের সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের নজরই কাড়েননি, ইউনেস্কো তাকে ‘হোপে বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ইউনেস্কোর পরিচালক ’৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পদক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বের শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস এবং মানবিক বিষয়ে অনেক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে শেখ হাসিনাকে। ২০১০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের পদক লাভ করেন। ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। তিনি দুবার স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের জন্য সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ লাভ করেন। তিনি ৩৭টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পদক লাভ করেন। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা তৃণমূল থেকে স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত আসনে নারী নেতৃত্বের নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে সুসংহত করেন। তিনি সংসদে স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর মতো উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ নেতৃত্বকে দু-দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেন। সংসদের বিরোধী দলের নেতা আরেক নারী জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ যেমন রয়েছেন তেমনি সংসদে সরকারি দলের উপনেতা হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীও দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের বহুল আলোচিত নির্বাচনে বেক্সিট ইস্যুতে লেবার পার্টির রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে করুণ পরাজয়বরণ করলেও কনজারভেটিভ পার্টির উত্থানের মুখে বাংলাদেশি বংশো™ভূত ব্রিটিশ চার কন্যা বিজয়ী হয়ে চমকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী তৃতীয়বারের মতো, রুশনারা আলী চতুর্থবারের মতো, ড. রূপা হক তৃতীয়বার ও আফসানা বেগম প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। ব্রিটিশ কমন সভায় বাংলাদেশি কন্যাদের এই অগ্রযাত্রা শেখ হাসিনার রাজনীতির অনুপ্রেরণার উৎসভূমি থেকে উঠে যাওয়া বলে অনেকে মনে করেন। শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের কার্যকর সিদ্ধান্তের কারণে এই দেশে নারী বিচারপতি থেকে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পাইলট, সচিব এমনকি মাঠ প্রশাসনে নারীদের হাতে ডেপুটি কমিশনার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নারীদের ভূমিকা রাখার অনন্য সাধারণ নজির সৃষ্টি করেছেন। রাজনীতি থেকে সমাজের সব ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা বা সামাজিক অবরোধ ভেঙে নারীর এগিয়ে আসার, নেতৃত্ব দেওয়ার দরজা খুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নারী ও ফুটবল ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক আসরেও তার শাসনামলেই পৃষ্ঠপোষকতায় উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তিনি দিয়ে আসছেন। তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিপৎসংকুল পথে জনপ্রিয় শক্তিশালী দলে পরিণত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে গণরায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনসহ ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার পর যে সামরিক দুঃশাসনের অন্ধকার নেমে এসেছিল সেই সময় শেখ হাসিনা দলের হাল ধরে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলকেই শক্তিশালী করেননি, কুড়িবারের বেশি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে, গৃহবন্দী ও কারাযন্ত্রণা ভোগ করে এসে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তার চলমান লড়াইয়ে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনেক পেছনে ফেলে প্রায় ৮.১৫ শতাংশে নিয়ে গেছেন এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। একের পর এক উন্নয়নের মহাপ্রকল্প দৃশ্যমান হচ্ছে। সমুদ্রজয়ের মধ্য দিয়ে উদ্ধার করেছেন আরেক বাংলাদেশ। বন্ধুত্বের হাত শক্তিশালী করে বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে যেমন পৌঁছে দিয়েছেন তেমনি শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন দিয়েছেন পাঠ্যপুস্তক। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা শুরু করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধ। ব্যাংকিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে তার পদক্ষেপ ব্যবসাবান্ধব নীতির প্রকাশ ঘটিয়েছে। দেশ তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে জয়ী হলে আজকের পশ্চিমারা বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিস্ময় দেখছেন তখন তারা চমকে যাবেন- এমনটাই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানকে সব মহলই স্বাগত জানিয়েছে। দেশের মুক্তিযোদ্ধা, অসহায় দরিদ্র, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, অসচ্ছল বিধবাসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য শেখ হাসিনার সরকার প্রসারিত করেছে দিনে দিনে মানবিক হাত। নিয়েছে নানা গণমুখী পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগের মূল সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নারী নেতৃত্ব তুলে আনতে শেখ হাসিনা বারবার ভূমিকা রাখছেন। এবারের কাউন্সিলেও দলের কমিটিতে যোগ্য নারী নেতৃত্ব তুলে আনার চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর