বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কূটনীতিকদের চোখ সিটি ভোটে

দফায় দফায় মেয়র প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক, ভোট কেন্দ্র থাকবে সিসি ক্যামেরায়, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশ পর্যবেক্ষণে রাখবে

মাহমুদ আজহার, গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

কূটনীতিকদের চোখ সিটি ভোটে

রাজধানীর মতিঝিলের গোপীবাগ এলাকায় গতকাল একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেন ইসি কর্মকর্তারা -রোহেত রাজীব

ঢাকার দুই সিটি ভোটের বাকি দুই দিন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘাম ঝরানো প্রচারও শেষ পর্যায়ে। উৎসবের ভোটের পাশাপাশি রয়েছে শঙ্কাও। এবারই প্রথম সব ভোট কেন্দ্র থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। ভোট দেখতে দেশবাসীর দৃষ্টি এখন রাজধানীর দিকে। কূটনীতিবিদদের চোখও সিটি ভোটের দিকে। এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন তারা। ঢাকা সিটির মেয়র প্রার্থী, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। দেশি পর্যবেক্ষক এক হাজারের ওপরে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন কমিশন, সরকারি দল ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তারা সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করছেন। ভোটে সবার জন্য সমান সুযোগ ও নির্বাচনী আচরণবিধি সবাইকে মানার অনুরোধও তাদের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের ঢাকা অফিসের প্রায় ৬৭ জন কর্মকর্তা সিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আতিকের সঙ্গে বনানীর নির্বাচনী কার্যালয়ে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। এরপর তিনি উত্তরে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাবিথের সঙ্গে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বৈঠক করেন। সর্বশেষ গত রবিবার গোপীবাগে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের দুই ঘণ্টা পরই সেখানে যান যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। সেখানে তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

ওইদিন রাতেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ভারত, ফ্রান্স, তুরস্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বিএনপির নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে সরকারি দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোটের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা, ইভিএমের বিরোধিতা, দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির অভিযোগ করে বিএনপি। বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন গণমাধ্যমকে বলেন, তারা ঢাকা সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোটের দিনও তাদের পর্যবেক্ষণ মাঠে থাকবে। যুক্তরাজ্য আশা করে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিটি নির্বাচনে  কোনো লেভেল  প্লেয়িং ফিল্ড নেই। যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ নেই, সেখানে নির্বাচনের ওপর মানুষের ভরসাও আসবে না। সব ধরনের বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করে একপক্ষকে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। আরেক পক্ষ সকল আইন ভঙ্গ করে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঢাকার উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দেওয়ার বিষয়টিও কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে। ইভিএমের বিরোধিতার বিষয়টিও কূটনৈতিক মহলে তুলে ধরা হয় বলে জানান তিনি।

তিন দিন সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে ভোট কেন্দ্র : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিনসহ তিন দিন কেন্দ্রের চিত্র ধারণ করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম ও দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুই সিটি ভোটে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো ভোটের দিন, আগের দিন ও পরের দিন ব্যবহার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, ভোট গ্রহণের দিন গোপন কক্ষের কোনো দৃশ্য সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে না। সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে সার্বিক সমন্বয় ও সহায়তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে।

থাকছে ৬৭ বিদেশি পর্যবেক্ষক : ঢাকার দুই সিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন ৬৭ বিদেশি পর্যবেক্ষক। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি ঢাকা সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে আমেরিকার ২৭ জন, ব্রিটিশ ১২ জন, সুইজারল্যান্ডের ৬ জন, জাপানের ৫ জন, নেদারল্যান্ডসের ৬ জন, ডেনমার্ক ২ জন, নরওয়ে ৪ জন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৫ জন পর্যবেক্ষক সিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

সহস্রাধিক দেশি পর্যবেক্ষক : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোট পর্যবেক্ষণে ইসির অনুমতি পেয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার অন্তত এক হাজার ১৩ জন পর্যবেক্ষক। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক মোহা. ইসরাইল হোসেন রবিবার জানান, নির্ধারিত সময়ে ২২টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থা থেকে আবেদনপত্র পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে উত্তর সিটি করপোরেশনে এসব সংস্থার ৫০৩ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫৭ জন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আরও ৫৩ জনের পর্যবেক্ষণের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর