শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

যেভাবে শেষ দিনটি গেল প্রার্থীদের

তাপসের ব্যস্ততা নেতা-কর্মীদের নিয়ে, মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে ইশরাকের বৈঠক, বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত আতিকের, তাবিথ সময় কাটালেন নির্বাচনী অফিসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী প্রচারণার টানা ২১ দিন পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি গতকাল ছিল প্রচারবিহীন। দুই সিটির নির্বাচনে ভোটের আগের এই দিনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী অত্যন্ত ব্যস্ততম দিন কাটিয়েছেন।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা নিজ নিজ বাসভবন ছাড়াও নির্বাচনী কার্যালয়ে দফায় দফায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনী অফিসে সময় কাটিয়ে কেউ কেউ তাদের দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। আবার নিজ নিজ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকসহ তাদের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়েছেন। কেউ বাবা-মায়ের মতো নিকটাত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতেও ভোলেননি। বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করেন দুই-একজন। তবে বাদ জুমা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার প্রার্থীর ব্যক্তিগত তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য।

দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাপস : সকালে ফজরের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় ঢাকা  দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি নিজ বাড়িতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করেন। এ ছাড়া পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও তাদের দায়িত্ব বণ্টনের কাজও করেন তাপস। দুপুরে গেন্ডারিয়া ফরিদাবাদ মাদ্রাসা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। নামাজ শেষে সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে সেখানে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। এরপর বনানী কবরস্থানে যান তাপস। সেখানে পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করে দোয়া- মোনাজাত করেন। এরপর সেখান থেকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খান। বিকাল ৩টায় বাসা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে যান নৌকার এই প্রার্থী। সেখান থেকে ফিরে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ দলীয় নেতা-কর্মী ও নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্টদের সময় দেন। রাত পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক ইশরাকের : ঢাকা সিটি দক্ষিণে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন দলীয় নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করেন। দুপুরে গুলশানের বে-টাওয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ব্রেন্ট ক্রিসটেনসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। কেন্দ্র দখল নয়Ñ ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন, সে জন্য আমরা ভোট কেন্দ্র পাহারা দেব। আর গুলশান আজাদ মসজিদে জুমার নামাজ শেষে তাবিথ আউয়াল সব ধরনের বাধা-বিপত্তি, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে সকালে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক সচিব ও গোপীবাগে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাছাড়া ভোটের আগের দিন বাদ জুমা তিনি তার বাবা সাদেক হোসেন খোকার কবর জিয়ারত করেন। নির্বাচনের ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিক পাঠানোর জন্য গণমাধ্যমে চিঠি দিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। দুপুরে গুলশানের বে-টাওয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ব্রেন্ট ক্রিসটেনসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। সবাই নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। আপনাদের সহায়তা করার জন্য প্রত্যেকটি কেন্দ্রে আমাদের কর্মীরা থাকবে। কেন্দ্র দখল নয়-  ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আমরা ভোট কেন্দ্র পাহারা দেব। কাজেই সব ধরনের বাধাবিপত্তি, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দুপুর ১২টায় গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইশরাক হোসেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গেও এ রকম সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। আমি আমার বক্তব্য জানিয়েছি, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন। বৈঠকে কয়েক দিন আগে গোপীবাগের নির্বাচনী প্রচারণার মিছিলের ওপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এই  বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ইশরাক। তিনি বলেন, ভোটের দিন দক্ষিণ ও উত্তরে বিভিন্ন কেন্দ্রে তাদের পর্যবেক্ষক টিম যাবেন।

আতিকের দিন যেভাবে কাটল : কয়েকটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া ভোটের পরিবেশ উৎসবমুখর আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকায় কোটি কোটি লোকের বসবাস। এখানে কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। এর পরও সার্বিক সুন্দর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন গতকাল বাদ জুমা বনানী জামে মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার নির্বাচনের আগের দিন প্রচারে অংশ না নিলেও ব্যস্ত সময় পার করেছেন আতিকুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদের বনানীর বাসায় যান আতিকুল ইসলাম। সেখানে থেকে গিয়ে আতিকুল ইসলাম জুমার নামাজ আদায় করেন বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম খান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। জুমার নামাজ আদায় শেষে আতিক বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তার মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী। পাশাপাশি ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আনিসুল হকের কবরও জিয়ারত করেন। বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান আতিকুল।

নির্বাচনী অফিসে তাবিথ : গতকাল সকালে কারওয়ান বাজারের নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে আসেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের  খোঁজ-খবর নেন এবং ভোট কেন্দ্রগুলোতে দলের দায়িত্বরতদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত দাফতরিক কাজ করেন। পরে তিনি অনির্ধারিতভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। আগামীকাল (শনিবার) সকাল থেকে সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোটারদের উদ্দেশে বলব, সব ধরনের বাধাবিপত্তি, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আপনারা ভোট কেন্দ্রে আসুন। আপনারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। পরে গুলশান আজাদ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় মুসল্লিদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে দোয়া চান তিনি।

নামাজ শেষে ধানের শীষের এই প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ১  ফেব্রুয়ারি ভোটারদের নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার নিশ্চয়তা  দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন। আমি ডিএনসিসির ৫৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা সবাই প্রস্তুত রয়েছেন। ভোটাররাও প্রস্তুত ভোট দেওয়ার জন্য। এখন সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, তিনি (রিজভী) আমার পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নেমেছিলেন। তার ওপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। তাবিথ বলেন, হামলা হলেও তার মনোবল ভালো আছে। যারা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করছে তারাই মূলত ভয় পাচ্ছে। এরপর তিনি আবারও কারওয়ান বাজারে হক টাওয়ারে নির্বাচনী ক্যাম্পে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান। সব প্রস্তুতি নিয়ে তিনি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়ম মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর