শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই এখন নেতিবাচক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই এখন নেতিবাচক

আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। শুধু বাংলাদেশের নয় বিশ্বের অনেক দেশেরই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক। বাংলাদেশের অর্থনীতিও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতিকে ভালো করার চেষ্টা করছি। আমাকে এক বছর সময় দিতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বুধবার জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিল নিয়ে বিরোধী দলের আপত্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সৃষ্টি হয় তখন সরকার অর্থায়ন করে থাকে। আমরা চেয়েছি, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সব কাজ করার পর যে অর্থ বাকি থাকবে সেখান থেকে ২৫ শতাংশ সরকারের কাছে থাকবে। এটা অনেকটা নিরাপত্তার মতো। তারা যখন বিপদে পড়বে তখন সরকার অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে। আমরা মাত্র ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা আনব। এ সময় তিনি বিভিন্ন করপোরেশনের নাম উল্লেখ করে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে আছে। বুঝতে হবে সরকারের ব্যর্থতা আছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অর্থ কোষাগারে নিয়ে গেলে তারল্য সংকট হবে কিনা এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা অলস আছে। ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা থাকলে লস (ক্ষতি)। ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা থাকা দরকার সে পরিমাণ টাকা থাকলেই ভালো। তাই তারল্য সংকট হবে না। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা আসবে। মন্ত্রী বলেন, যারা জাতীয় সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে একজন আমাকে ব্যবসায়ী মন্ত্রী বলেছেন। ব্যবসা করা তো অপরাধ না। আর আমি ব্যবসা করেছি ১২ বছর আগে। এখন আমি মন্ত্রী। এখন আর কোনো ব্যবসা নেই। তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ব্যাংকের দুর্বল অবস্থা। লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমি আসার পর (মন্ত্রী হওয়ার পর) আপনারা (সাংবাদিকরা) কয়দিন বলতে পারছেন, টাকা পাচার হয়ে গেছে? আমি তো দেখি না। অর্থনীতিকে ভালো অবস্থানে আনতে মন্ত্রী কাজ করছেন মন্তব্য করে বলেন, আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আমাকে এক বছর সময় দিতে হবে। তারপর দেখব কতটা উন্নতি করতে পেরেছি। বাজেটের সাত মাস হয়েছে, আরও পাঁচ মাস বাকি। তারপর আমরা বুঝতে পারব কোথায় অর্জন হয়েছে, কোথায় হয়নি। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তা আমরা নিয়ে ফেলেছি-এমন অভিযোগ আসছে। আমরা গত অর্থবছরে ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৬১ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা ঋণ করেছিলাম। আর এই বছর আমরা ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা আমরা কম নিয়েছি। রাজস্ব আয় নিয়ে কথা উঠেছে। রাজস্ব আয় নেই। তাই সরকার ঋণ করছে। রাজস্ব আয় নেতিবাচক পাবেন যদি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে মূল্যায়ন করেন। এদিকে গতকাল সকালে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির খারাপ সময় যাচ্ছে। সারা পৃথিবীর অর্থনীতি সংকটে। তার প্রভাবে বাংলাদেশে সংকট হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুত এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারব। বিডিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও কাজী আলমগীরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন এবং পরিচলক কাজী তরিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলন।

মুস্তফা কামাল বলেন, এখন কোনো দেশেই আমদানি-রপ্তানি সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমদানি রপ্তানি কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু কিছু খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আমি আশা করি বছর শেষে এই খাতগুলো পিছিয়ে থাকবে না। আমদানি-রপ্তানির অবস্থা ভালো হয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক খাতের অবস্থাও খুব ভালো নয়। ব্যাংকগুলো যদি ভালো চলত, তবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করতে হতো না। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ কারণে সংসদে আমাকে গালি শুনতে হচ্ছে। আমার জন্য আমি গালি খাইনি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য আমাকে সংসদে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আশা করব, আমার জন্য নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আপনারা সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করবেন।

সরকার ১০ বছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৩ লাখ কোটি টাকা : গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারের গত দশ বছরে (২০০৯-২০১৯) বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক হতে মোট ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ এই সময়কালে মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা নিট ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশ্নকর্তা ছিলেন মহিলা এমপি মমতা হেনা লাভলী।

বৈদেশিক ঋণ ২৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা : বিএনপির মো. হারুনুর রশীদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বৈদেশিক ঋণ ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ২ হাজার ৭১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই : গণফোরামের মোকাব্বির খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বর্তমানে শেয়ারবাজারে কিছু তারল্য সংকট থাকলেও ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। বর্তমান বিরাজমান তারল্য সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।

সর্বশেষ খবর