সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব চমকে বাংলাদেশ

ভারতকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন

মেজবাহ্-উল-হক

বিশ্ব চমকে বাংলাদেশ

মিড উইকেটে বল ঠেলে দিয়েই রকিবুল হাসান ছুটলেন ব্যাট উঁচিয়ে। ক্যাপ্টেন আকবর আলী দুই হাত বাড়িয়ে দৌড়াতে থাকেন। ড্রেসিংরুম থেকে তখন মাহমুদুল হাসান জয়, শরিফুল ইসলাম, তৌহিদ হৃদয়রা গর্বে লাল-সবুজ পতাকা হাতে মাঠে ঢুকে পড়েন। অবশেষে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল টাইগাররা। স্বপ্নের ফাইনালে ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়ে যুব বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল যুবারা। ক্রিকেট বিশ্বে এখন বাংলার যুবারাই সেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে মহানাটকীয় ম্যাচে টাইগাররা জয় তুলে নেয় ৩ উইকেটে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৪৩ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক আকবর আলী। স্বপ্নের ফাইনালে ‘ক্যাপ্টেনস নক’ খেলে ম্যান অব দ্য ফাইনাল পুরস্কারও পেয়েছেন তিনিই। ‘আকবর দ্য গ্রেট’। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি হলো ঠিক ‘ফাইনালের’ মতোই। উত্তেজনায় ঠাসা। ম্যাচের শেষটা ছিল চরম নাটকীয়। ১৫ রান বাকি থাকতে বৃষ্টি নামে। তখন টাইগারদের হাতে ছিল ৩ উইকেট। বল বাকি ছিল ৫৪টি। বৃষ্টি থামলে ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের টার্গেটটা আরও সহজ হয়ে যায়। জয়ের জন্য ৩০ বলে দরকার মাত্র ৭ রান। ২৩ বল হাতে রেখেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ছিল বাংলাদেশের বোলারদের একচ্ছত্র দাপট। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও দুর্দান্ত। মাঝে কেবল কিছুটা খেলার গতি বদলে দেন ভারতের লেগস্পিনার রবি বিষ্ণোই। তার বিষাক্ত এক স্পেলে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১৭৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে ৫০ করে বাংলাদেশ। এরপরই শুরু বিষ্ণোইয়ের জাদু। পরের ৩৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। ওপেনার ইমনও ‘রিটায়ার্ড হার্ট’। দলীয় ১০২ রানে ৬ উইকেট পতনের পর শিরোপাকে মনে হচ্ছিল দূরের ‘বাতিঘর’। ঠিক এমন সময় ২৫ রানে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হওয়া ওপেনার ইমন বাইশগজে ফেরেন। উইকেটে থাকা ক্যাপ্টেন আকবর আলী যেন নতুন করে জীবনী শক্তি পেয়ে যান। টিম টিম করে জ্বলতে থাকা বাতিঘরের আলো অনুসরণ করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে নিয়ে যান কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে। জয় থেকে ৩৫ রান দূরে থাকতে ক্যাচ হয়ে যান ইমন। আকবরের সঙ্গে তার ৪৩ রানের জুটিই বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। ইমন করেছেন ৪৭ রান। তারপর নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও অধিনায়ক আকবর দক্ষ নাবিকের মতো হাল ধরে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে। গতকাল টাইগারদের জয়ের ভিত করে দেন বোলাররা। পুরো টুর্নামেন্টে যে ভারতীয় ব্যাটিংআপকে কোনো দল অলআউট করতে পারেনি সেই দলকেই কাল বাংলাদেশের যুবারা প্যাকেট করে ফেলে ১৭৭ রানে। ভারতের ইনিংসে জয়সয়লের ৮৮ এবং তিলকের ৩৮। আট ব্যাটসম্যান তো দুই অঙ্কের কোটাই স্পর্শ করতে পারেনি। ফিল্ডিংয়ের সময় পুরোটা ছিল শরিফুলময়। এই তরুণ বোলার ১০ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ৩১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। দুটি দুর্দন্ত ক্যাচ নিয়েছেন। একটি অবিশ্বাস্য রানআউট করেছেন। এ ছাড়া বাউন্ডারি লাইনে তার ফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারতের ব্যাটিংয়ের প্রায় পুরো সময়ই নিয়ন্ত্রণ করেছে বাংলাদেশ। একমাত্র জয়সয়লের হাফ সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো বড় কোনো ইনিংস নেই। স্বপ্নের ফাইনালে কাল যুবা টাইগারদের নিয়মিত একাদশে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী তাই একজন স্পিনার কমিয়ে বাড়ানো হয়েছিল পেসারের সংখ্যা। শরিফুল ও সাকিবের সঙ্গে তৃতীয় পেসার ছিলেন অভিষেক। আর এই অভিষেকই কাল বাজিমাত করে দিয়েছেন। নিয়েছেন ৩ উইকেট। ভারতের ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন এই পেসারই। দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসার সাকিবও। ২৮ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। পাওয়ার প্লের সময় প্রথম দুই ওভারেই মেডেন নিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী এই পেসার। বোলিংয়ে পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল তিন পেসারের হাতে। শরিফুল-সাকিব-অভিষেক মিলেই নিয়েছেন ভারতের ৭ উইকেট। যথারীতি বোলিংয়ে সবচেয়ে কিপটে ছিলেন রকিবুল। এই স্পিনার ১০ ওভারে ২৯ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। ফাইনাল মানেই একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই! সেখানেও কাল এগিয়ে ছিল টাইগাররাই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই পেসার শরিফুলকে ‘স্লেজিং অস্ত্র’ ব্যবহার করতে দেখা যায়। পচেফস্ট্রুমের ফাইনালে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। দুরন্ত সাহসিকতা দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নিয়েই মাঠ ছাড়েন বাংলার দামাল ছেলেরা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। যা খেলাধুলার ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি। বাংলাদেশের যুবারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের সাফল্যে খুশি। তোমরা দেশের সম্মান উজ্জ্বল করেছ। আশা রাখি সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী চ্যাম্পিয়ন যুবাদের অভিনন্দন জানান। আইসিসির সাবেক সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর