সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ সতর্কতায় দেশ

করোনাভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ দেশের তালিকায় নেই, রংপুর মেডিকেলে ভর্তি রোগী আক্রান্ত নন, চীনজুড়ে এখনো আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনে মহামারী আকার ধারণ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশ। রয়েছে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার। সম্প্রতি জার্মানির হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি ও রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তার রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো আসেনি বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন; এদের মধ্যে ৬৪ জনই একটি প্রমোদতরিতে আছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন।

তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে চীনের স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হংকং ও তাইওয়ান। হংকংয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত আরও ২৬ জন। তাইওয়ানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৭ জন। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ১০ এর বাকি দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কম্বোডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ভিয়েতনামে ১৩ জন, মালয়েশিয়ায় ১৬ জন, সিঙ্গাপুরে ৪০ ও কম্বোডিয়ায় একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর রয়েছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ম্যাকাও, ফিলিপাইন, রাশিয়া, কানাডা, ভারত, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিয়ানমার। অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন, ম্যাকাওতে ১০ জন। ফিলিপাইনে ভাইরাস আক্রান্ত তিনজন, মারা গেছেন একজন। এ ছাড়া রাশিয়ায় দুজন, কানাডায় সাতজন, ভারতে তিনজন, জার্মানিতে ১৩ জন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাতজন ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। মূলত চীনের উহান নগরী থেকে আকাশপথে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী প্রবেশের হারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা দেখে ধারণা করা যায়, কী হারে ভাইরাস অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে রুট যত ব্যস্ত, সেটিতে আক্রান্ত যাত্রী চলাচলের আশঙ্কা তত বেশি। এই সম্ভাব্য ধারণা ব্যবহার করে আমরা অন্য বিমানবন্দরগুলোতে ‘আপেক্ষিক আগমনী ঝুঁকি’ হিসাব করেছি। বাংলাদেশ থেকে চীনের বেইজিং, গুয়াংজু, কুনমিংসহ কয়েকটি রুটে বিমান চলাচল করে। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নাম আসেনি বাংলাদেশের। এখানে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তও পাওয়া যায়নি।

এখনই সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করার কথা ভাবছে না আইইডিসিআর : করোনাভাইরাসের কারণে সবাইকে প্রয়োজন ছাড়া চীন ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। চীনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও লোকাল ট্রান্সমিশনের কারণে সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশও সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখনই সিঙ্গাপুর ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে না বাংলাদেশ। গতকাল আইইডিসিআর কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরে সবাইকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮ হাজার ২১৩ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, রংপুর মেডিকেলে ভর্তি চীন ফেরত ওই রোগীর মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ছিল না। তার জ্বর কাশি কিছুই ছিল না। এক ধরনের শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। সে কারণে তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে নিয়ে এবং তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তার অবস্থা এখন ভালো। অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, চীন ফেরত যাত্রীদের করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। চীনের উহান বা অন্য প্রদেশ থেকে আসার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলে তাদেরও ভয়ের কারণ নেই। আর যাদের আসার ১৪ দিন হয়নি তাদের মধ্যে জ্বর, কাশি কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে আইইডিসিআর’র হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। কারও শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেলে তা কখন গণমাধ্যমকে জানানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এটি জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। কোনো রোগী শনাক্ত হলে আমাদের তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কাছে জানাতে হবে। এটা যেহেতু পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি। এ কারণে কিছু পদ্ধতি মেনে আমাদের সেটা জানাতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কথা বলেই আমরা নির্ধারণ করব এটা কখন কীভাবে জানাতে হবে।

সন্দেহজনক করোনা রোগীদের খবর প্রচারে গণমাধ্যমকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, সন্দেহজনক কেউ পরীক্ষাধীন আছেন এমন ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটা করতে না পারলে এ ধরনের ব্যক্তি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে পারেন।

লিগ্যাল নোটিস : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। গতকাল ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিস পাঠান। স্বাস্থ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, আইসিসিডিআরবি এর পরিচালক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বরাবর এ নোটিস পাঠানো হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে হাই কোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিসে ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি আক্রান্ত : সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ৪৩ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন। ৩৯ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন। তাকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেসে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর