সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শিগগিরই সাত বিভাগে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল

সারা দেশে প্রায় ছয় হাজার মামলা বিচারাধীন

আরাফাত মুন্না

মানব পাচার অপরাধের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এসব ট্রাইব্যুনালের জন্য বিচারকসহ ৩৫টি পদও সৃজন করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরে ‘মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপনের কাজ এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসে আদেশ জারির পর আগামী মার্চের মধ্যে এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইন প্রণয়নের প্রায় আট বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এ ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের’ ২১ (১) ধারায় এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা বলা আছে। আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। জানা গেছে, এখন সারা দেশে মানব পাচারের ঘটনায় দায়ের করা প্রায় ছয় হাজার মামলা বিচারাধীন। মামলাগুলোর বিচারের ভার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ওপর রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানব পাচার মামলার বিচার। আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মানব পাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে এই মামলাগুলো এখানে চলে আসবে। এতে উভয় ট্রাইব্যুনালে বিচারের গতি বাড়বে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এতদিন মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধের বিচার হতো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এ জন্য এই ট্রাইব্যুনালগুলোর ওপর চাপ কমাতে আমরা সাত বিভাগে ‘মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ করছি। এতে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে। মন্ত্রী বলেন, মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনে সব এপ্রুভাল এরই মধ্যে হয়ে গেছে। বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মার্চেই এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। কিছু বিচারককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ সাত ট্রাইব্যুনালের জন্য সৃজিত ৩৫টি পদ হচ্ছে- সাতজন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক, সাতজন সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, সাতজন বেঞ্চ সহকারী, সাতজন গাড়িচালক এবং অফিস সহায়কের সাতটি পদ। ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’-এর ২১ ধারা অনুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। আইনের ২১(১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন অপরাধগুলো দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার সরকারি গেজেট দ্বারা দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যে কোনো জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ওই জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ ক্ষমতায়িত করতে পারবে।

আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। আইনের এ-সংক্রান্ত ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (এক শত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ সম্পন্ন করবে। ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর বিধান সত্ত্বেও ওই সময়সীমার মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা বিচারকাজকে বাতিল করবে না, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ওই সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাবে। এ আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদন্ড এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান আছে।

সর্বশেষ খবর