বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

অবৈধ দখল উচ্ছেদ থামাতে ছুটে গেলেন এমপি আসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ দখল উচ্ছেদ থামাতে ছুটে গেলেন এমপি আসলাম

ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত করতে নেমে গতকালও ঢাকা-১৪ আসনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হকের বাধার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এদিন বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদের সংযোগস্থল চরওয়াশপুর  মৌজায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর সময় লোকজনসহ হাজির হয়ে অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ বাকবিতন্ডা হয়। এর আগের দিনও ওই এলাকায় অভিযানে গেলে আসলামুল হক বাধা দেন বলে অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএ’র। তবে বাধা উপেক্ষা করেই অভিযান অব্যাহত রাখে সরকারি সংস্থাটি। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, কেরানীগঞ্জে বছিলা সেতুর পশ্চিম পাশে চর ওয়াশপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর দখল করে মাইশা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করেছেন সংসদ সদস্য আসলামুল হক। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করতে নদীর প্রায় ৫ একর জায়গা ভরাট করা হয়েছে। গতকাল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি পাকা ব্যাংক প্রটেকশন, তিনটি পাকা ওয়ালসহ ১৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আগের দিন মাইশা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির অবৈধ অংশসহ ২৩ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দুই দিনই লোকজন নিয়ে অভিযানে বাধা দেন সংসদ সদস্য আসলামুল হক। মঙ্গলবার মাইশা গ্রুপের হয়ে অভিযানে বাধা দিতে আসলে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল ১০টায় অভিযান শুরু হলে সোয়া ১১টার দিকে ৭০-৮০ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন আসলামুল হক। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা তার কেনা দাবি করে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন,  ‘যৌথ জরিপের কথা বলে যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে, আমাকে সেই কাগজ না দেখালে কাজ করতে  দেব না। আপনারা আপনাদের মতো খুঁটি গাড়লে তো হবে না। যৌথ জরিপের যে কাজটা করেছেন সেই ম্যাপ আমাকে দেখান।’ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সিএস, এসএ, আরএস অনুযায়ী এগুলো মালিকানা জমি। আমি ক্রয় করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যেভাবে জরিপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই জরিপ অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চলছে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সময় বিআইডব্লিউটিএ আমাকে অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল। আবার তারাই বিনা নোটিসে আমার জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে।’ এ সময় অভিযানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন সংসদ সদস্যকে বলেন, যে জায়গা ব্যবহার করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ অনাপত্তি দিয়েছে সেই জায়গাতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে না। গত মঙ্গলবার তারা যাচাই করে দেখেছেন, যেখানে উচ্ছেদ চালানো হচ্ছে সেখানে কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। এই জায়গাটা পরবর্তীতে ভরাট করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী যেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেই জায়গাটাও এটা না। এক পর্যায়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংসদ সদস্যকে বলেন, আমাদের কাজ করতে দিন। আজ আমরা শুধু একটা সীমানা দিয়ে গেলাম। যদি মনে করেন যৌথ জরিপ আছে, আমরা সেটা নিয়েই আসব। এদিকে অভিযোগ জানাতে মন্ত্রণালয় বা আদালতে না গিয়ে স্পটে এসে কাজ বন্ধের নির্দেশ কতটা আইনসিদ্ধ?- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে এমপি আসলামুল হক বলেন, ‘ভাই, আমি তাদের কাছে প্রতিকার চাচ্ছি না। আমার প্রশ্ন- আপনি অনাপত্তিপত্র দিয়েছেন কেন? আমাকে হেয় করা হলো কেন? সেই সময় নদীর জায়গা চিহ্নিত করে দিলে আজ আমি এখানে ওয়াল করতাম না। আমার জায়গাতেই করতাম।’ সংবিধানে রয়েছে কোনো নদী দখলদার জনপ্রতিনিধি হতে পারবে না। আপনি কি পদত্যাগ করবেন?- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে আসলামুল হক বলেন, এ বিষয়ে যখন জরিপে প্রমাণ হবে তখন দেখা যাবে। আগে জরিপটা হোক। এ প্রশ্নের উত্তর এখন দেব না। সরি।

সর্বশেষ খবর