বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

লন্ডনে বাংলাদেশিদের লাশ দাফনে জটিলতা

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে মৃত বাংলাদেশিদের লাশ দাফন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ শুধু গার্ডেন অব পিস কবরস্থানে দাফনের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে, অন্য কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফনের অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ড. আনিছুর রহমান আনিছ জানিয়েছেন, পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশিসহ মুসলিমদের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত গার্ডেন অব পিস। লন্ডন ও লন্ডনের উপকণ্ঠের মুসলিম কবরস্থানগুলোর মধ্যে এই গোরস্থানেই করোনায় মৃতদের দাফন করতে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অন্য কবরস্থানগুলো করোনায় আক্রান্তদের লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, ‘কমিউনিটিতে বড় সমস্যা এখন লাশ দাফন প্রক্রিয়া নিয়ে। সম্প্রতি আমার পরিচিত আরেকজন করোনায় মারা যাওয়ার পর দুটি দাফন সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। দুটি প্রতিষ্ঠান জানায়, করোনাভাইরাসে মৃতদের তারা দাফন করেন না। তবে গার্ডেন অব পিস দাফন করে। গার্ডেন অব পিসও খুব ব্যস্ত। প্রতিদিন তাদেরকে অনেক লাশ দাফনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এজন্য তাদের শিডিউল পাওয়াও অনেক সময়ের ব্যাপার।’ তিনি জানান, কমিউনিটির অন্যতম পুরাতন মুসলিম ফিউনারেল সার্ভিস তসলিম হাজী ফিউনারেল সার্ভিসও করোনা আক্রান্ত মারা যাওয়া রোগী দাফন বন্ধ রেখেছে। তাদের টেলিফোন করলে তারা সরাসরি গার্ডেন অব পিস কবরস্থানের নম্বর দিচ্ছেন এবং সরাসরি সেখানেই যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ব্রিকলেন ফিউনারেল সার্ভিসের অন্যতম কর্ণধার পারভেজ কোরাইশী বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে একমাত্র আমরাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের দাফন করছিলাম। কিন্তু আমার পার্টনার কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকায় আমিও গত ৬ দিন ধরে আইসোলেশনে আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গত সপ্তাহে আমরা করোনা ডেডবডির জন্য একটি কবরস্থানে যোগাযোগ করলে তারা ডেডবডি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে গার্ডেন অব পিসে কবর দিতে হয়েছে।’ ফিউনারেল সার্ভিসে লাশ রাখার স্বল্পতার জন্য এখন সরাসরি হাসপাতাল থেকে লাশ কবরস্থানে নিয়ে সেখানে ধৌত করে, জানাজা সম্পন্ন করে লাশ দাফন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বয়স্ক কেয়ার হোমে ৭ জনের মৃত্যু : বাংলাদেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পূর্ব লন্ডনের একটি বয়স্ক কেয়ার হোমে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্ট্যাপলি গ্রিনের হাউথর্ন গ্রিন হোমের ২১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই কেয়ার হোমে মোট ৪৮ জন বয়স্ক মানুষ থাকেন। এর অন্তত ১২ জন স্টাফ সেলফ আইসোলেশনে চলে গেছেন।

জানা গেছে, মারা যাওয়াদের মধ্যে কে কোন দেশের বলা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে বেশিরভাগই ব্রিটিশ বাংলাদেশি মারা গেছেন। মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে জামশেদ আলী নামে একজন ৮৭ বছরের বয়স্ক ব্রিটিশ বাংলাদেশিও রয়েছেন। তিনি ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসেন এবং দর্জি হিসেবে বিখ্যাত ব্র্যান্ডেড কোম্পানি বারবেরিতে কাজ করতেন। তিনি গত ২৪ মার্চ পূর্ব লন্ডনের রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান। গত তিন বছর ধরে তিনি পূর্ব লন্ডনের হাউথর্ন হোম কেয়ারের বাসিন্দা ছিলেন। জামসেদ আলীর কন্যা লুতফা হুড স্থানীয় বলেছেন, ‘আমরা জানতাম এই ভাইরাস বাবাকে ধরলে তিনি আর বাঁচবেন না। কেয়ার হোম নিরাপদ না জানলে হাসপাতাল থেকে যখন তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন, তখন তাকে সেখানে ফিরে যেতে দিতাম না।’

সর্বশেষ খবর