সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় ৭৩ ভাগ মৃত্যু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের

২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৬৬৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় ৭৩ ভাগ মৃত্যু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের

করোনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন প্রবীণরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া দুই হাজার ৩৫২ জনের মধ্যে এক হাজার ৭২৮ জনেরই বয়স ৫০ বছরের বেশি। শতকরা বিচারে এটা ৭৩ শতাংশের বেশি। গত কয়েক দিনে এ হার প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৭ জন, যার মধ্যে ৩৭ জনেরই বয়স ৫০ বছরের বেশি। শতকরা বিচারে এ হার প্রায় ৭৯ শতাংশ। এদিকে গতকালও নতুন করে দেশে দুই হাজার ৬৬৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কম নমুনা পরীক্ষার কারণে শনাক্ত কম হলেও এদিন শনাক্তের হার ছিল এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪ দশমিক ১১ জনের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হার ছিল ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ, শনাক্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে।

কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যোগ দিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭টি ল্যাবে ১১ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৬৬৬ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুই হাজার ৩৫২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪৭ জনের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। তাদের মধ্যে ৪৩ জন হাসপাতালে এবং চারজন বাড়িতে মারা গেছেন। মৃতদের ২৩ জন ঢাকা বিভাগের, ছয়জন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, দুজন বরিশাল বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের এবং চারজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বয়স বিবেচনায় মারা যাওয়া ৪৭ জনের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন, ২০ বছরের বেশি দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৫ জন, ষাটোর্ধ্ব ২২ জন। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮০ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৯৩ হাজার ৬১৪ জন।

এখন পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়াদের ৭৩ দশমিক ৪৬ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি। ৫০ বছরের কম বসয়ীদের মৃত্যুর হার ২৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম শিশুদের। এখন পর্যন্ত ১০ বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে ১৪ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ২৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৭৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৬৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৩৪১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৭০১ জন ও ষাটোর্ধ্ব এক হাজার ২৭ জন মারা গেছেন।

এদিকে ল্যাবের সংখ্যা বাড়লেও কমছে নমুনা পরীক্ষা। গতকালের ব্রিফিংয়ের তথ্যমতে, ১১ হাজার ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টায়। এর আগের দিনও ১১ হাজার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় যা ছিল সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। আমাদের বিভিন্ন জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি। সিলেট : চলতি মাসের ১১ দিনে সিলেট বিভাগে মারা গেছেন ২৬ জন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে মারা গেছেন আরও চারজন। এ নিয়ে সিলেটে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১ জনে। বেশিরভাগই মারা যাচ্ছেন হাসপাতালে এসে। চিকিৎসকরা বলছেন, যখনই বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কমছে, তখনই বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। এদিকে সিলেট বিভাগে গত শনিবার রাত পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৯৬ জন। সুস্থতার দিক দিয়েও সারা দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগ। সারা দেশে আক্রান্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার যেখানে ৫০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেখানে সিলেট বিভাগে সুস্থতার হার ৩৮ দশমিক ৫৮।

কুমিল্লা :  গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দুই নারীসহ আরও পাঁচজন মারা গেছেন। পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ষাটোর্ধ্ব। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ ৬৮ জন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ১২৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া কুমিল্লায় রোববার করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১০ জনের। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৪৭৪ জন। বগুড়া : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও দুজন মারা গেছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। পাঁচজনের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব তিনজন। জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৭০ জন। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় শনাক্ত হলো মোট তিন হাজার ৭১১ জন করোনা রোগী। বাগেরহাট : গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বাগেরহাটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩১১ জনে। এর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

বরিশাল : শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ চারজনসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আটজনের মধ্যে সাতজনই ষাটোর্ধ্ব। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ জনের করোনা পজিটিভ।

দিনাজপুর : জেলার বিরামপুরে করোনায় আক্রান্তের একদিন পর শ্বাসকষ্ট নিয়ে আনিছুর রহমান মিনু (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দিনাজপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় সাংবাদিকসহ ২৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪২ জন। চাঁদপুর : এ জেলায় আরও ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ২৮৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৬ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর