শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া

‘কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’ - এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার নাম সাদিয়া জান্নাত জান্নাতুল ফেরদৌস। গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছে তিনটি পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন সেট, তিনটি মেমোরি কার্ড, সাতটি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই পাওয়া যায়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর নাজির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী গুলশান থানায় প্রতারক জান্নাতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় জান্নাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ঢাকার মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম শরীফ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। গতকাল সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, গত ১০ বছর ধরে পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি কানাডার সিটিজেন পাত্রীর জন্য পাত্র চাই বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত। বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহীরা ফোন করত। তখন এরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। প্রাথমিক অনুসন্ধানে গ্রেফতার জান্নাতের ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। কুমিল্লার দেবিদ্বারের মেয়ে জান্নাত এসএসসি পাস না করলেও পোশাক এবং কথাবার্তায় স্মার্টনেসের কারণে কানাডাপ্রবাসী বলে লোকজনের বিশ্বাস অর্জনে সমর্থ হন। অনেকেই তার ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জান্নাত তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এ প্রতারণা শুরু করেন। প্রতারণার অংশ হিসেবে ভুক্তভোগীদের রেস্তোরাঁয় দাওয়াত করে আইনজীবী, দোভাষী, পিএসসহ পাত্রী হাজির হতো। এরপর পাত্রকে বলা হতো পাত্রীর কানাডায় ব্যবসা রয়েছে। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে পাত্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন জান্নাত। সিআইডি কর্মকর্তা রেজাউল আরও বলেন, ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দেখে নাজির হোসেন নামে এক ব্যক্তি প্রতারক জান্নাতের মোবাইলে ফোন করেন। গত ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবেন এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন - জান্নাতের এসব কথায় বিশ্বাস করেন ভুক্তভোগী। প্রাথমিকভাবে তিনি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে নাজিরকে প্রতারক জান্নাত জানান, কানাডায় প্রচন্ড শীত তাই সেখান থেকে তার ২০০ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন। ডিএইচএলের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে নাজিরের কাছ থেকে ট্যাক্স ও ডিএইচএল বিল বাবদ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন জান্নাত। এভাবে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার একটি হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০ কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সেগুলোয় ১ কোটি টাকা জমা আছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে মোবাইল বন্ধ করে রাখতেন জান্নাত। চক্রের অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর