হোসনে আক্তার ওরফে জলি। তার ছেলে ইফাজ সুলতান। মা-ছেলে দুজন মিলে গড়ে তুলেছেন ইয়াবার সাম্রাজ্য। মা জলি ইয়াবা-সম্রাজ্ঞী আর ছেলে ইয়াবা-সম্রাট। ইয়াবা ব্যবসা করে বাড়ি-গাড়ি বানিয়েছেন তারা। বেপরোয়া চলাফেরা আর টাকার গরমে তাদের দাপট সীমাহীন। তারা মূলত কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকায় সাপ্লাই দিতেন। ইয়াবা সাপ্লাই দেওয়ার জন্য ইফাজসহ তার কর্মীরা চারটি প্রাইভেটকার এবং একটি পিকআপ ব্যবহার করতেন। আর মা জলি ইয়াবা সাপ্লাইয়ে গৃহকর্মীসহ একাধিক নারীকে ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি ২৩ দিনের ব্যবধানে মা-ছেলেকে গ্রেফতার করে এমনই তথ্য দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৮ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে থেকে ইফাজ সুলতানকে গ্রেফতার করে ডিএনসি। এ সময় তার কাছ থেকে তিন হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ইয়াবা বহনের কাজে ব্যবহৃত ল্যানসার মিতশুবিশি লাল রঙের একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ-৩১-৩১৯৭), ইয়াবা বিক্রির ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন ও চারটি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় মাদক আইনে ডিএনসির খিলগাঁও সার্কেলের পরিদর্শক মো. ফজলুল হক খান বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ইফাজ এখন কারাগারে। এদিকে মাত্র ২৩ দিনের ব্যবধানে ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ইফাজ সুলতানের মা হোসনে আক্তার ওরফে জলি এবং তার দুই সহযোগী হুমাইরা ও কনিজকে গ্রেফতার করে ডিএনসি। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় মাদক আইনে ডিএনসির খিলগাঁও সার্কেলের পরিদর্শক মো. ফজলুল হক খান বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় জলি এখন কারাগারে রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলি তার ছেলে ইফাজ সুলতানকে নিয়ে রাজধানীর মুগদা থানার দক্ষিণ মুগদাপাড়ার ২২/১ নম্বর ‘মায়ের আঁচল’ বাড়ির ৮-জি ফ্ল্যাটে থাকেন। ইফাজ সুলতানের বাবার নাম খালেদ সোবহান চৌধুরী। ইফাজের গ্রামের বাড়ি ফেনী সদরের ফতেহপুরে। জলি সোবহানের প্রথম স্বামী খালেদ সোবহান চৌধুরী আর দ্বিতীয় স্বামীর নাম মুফতি এজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। জলির গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার পূর্ব পুইছড়িতে। ডিএনসির এক কর্মকর্তা বলেন, ইফাজ সুলতান ও তার মা জলি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছেন। তারা নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি বেসরকারি টেলিভিশনের স্টিকার ব্যবহার করতেন। দাপটের সঙ্গে গাড়ি হাঁকিয়ে ইয়াবা সাপ্লাই দিতেন। তারা চট্টগ্রামে মাদকের বড় ডিলার রুবেলের কাছ থেকে ইয়াবা আনতেন। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকেও ইয়াবা সংগ্রহ করতেন তারা। ইয়াবা বিক্রি করে মা-ছেলে বাড়ি-গাড়ি বানিয়েছেন। ইফাজ সুলতান কারা তত্ত্বাবধানে প্রিজন সেলে রয়েছেন। গ্রেফতারের পর তিনি অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেন। এরপর তার কভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি এখন ডিএমসিএইচ-২ ভবনের ৯০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ছয়-সাতজন পুলিশ ও কারারক্ষী তার আশপাশে বসে আছেন। বেড, রুম ও বারান্দায় বেশ কয়েকজন লোকের আনাগোনা দেখা গেছে। ডিএনসির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপ-পরিচালক মানজুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মা ও ছেলে যৌথভাবে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন। পরে সেগুলো ঢাকায় এনে বিক্রি করতেন তারা। তারা পাইকারি বিক্রেতা ছিলেন। মাদকের ব্যবসা করে তারা অনেক সম্পদ বানিয়েছেন। মা-ছেলের এই চক্রে অনেকে জড়িত। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।