শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্থানান্তরের মাধ্যমে সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে

----- অধ্যাপক জিনাত হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানান্তরের মাধ্যমে সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞন বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের মাধ্যমে বিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর তা হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধু জায়গাই দেয়নি তাদের স্থানান্তরও করেছে যাতে রোহিঙ্গারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। তাদের অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে এবং তাদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার যেন বঞ্চিত না হয়, এ জন্যই ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। ড. জিনাত হুদা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা বা বাকবিতন্ডা হচ্ছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গা যারা এদেশে এসে দীর্ঘদিন কক্সবাজারের উখিয়াসহ অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট সাহায্য করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রতি অত্যন্ত মানবিক আচরণ করেছেন। আমরা যদি বিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, যারা বড় রাষ্ট্র, মানবাধিকার এবং নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকার কথা যে দেশগুলো বলে তাদের কেউই কিন্তু শরণার্থীদের বোঝা নিজের কাঁধে নিতে চায় না। এমনকি মুসলিম দেশগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সেখানে বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে কোটি কোটি মানুষের বসবাস এবং যে দেশে অনেক গরিব মানুষ সেই দেশটিই এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা কাঁধে নিয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থান নিয়েও নানা মতবাদ আছে। তাদের অনেকে উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানা উগ্রবাদী সম্প্রদায় আছে তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার কথা শোনা গেছে। আবার নারী পাচার, মাদক বিক্রির মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাে ও তারা জড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আমাদের পরিবেশের ওপরও তারা বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। এই অধ্যাপক আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সব এনজিও সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক, বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এ ইস্যুতে মোটেও প্রশংসার দাবি রাখে না। তাদের বরং সহযোগিতা করার কথা ছিল যা তারা মোটেও করেনি। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জেনেছি, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করত। নারীরা সেখানে নির্যাতনের শিকার হতো। আর ভাসানচরে নির্মিত ঘরগুলোতে একটি পরিবারের থাকার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার সবকিছুই আছে। সেখানে পুকুরের ব্যবস্থা আছে, সাইক্লোন মোকাবিলার ব্যবস্থা আছে এবং বিদ্যুৎ ও স্কুলের সুবিধা আছে। আজকের দিনে দূর বলে কিছু নেই। পৃথিবীতে দেশে দেশে অনেক মানুষ দ্বীপে বসবাস করে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের নেতারা যাদের মাঝি বলা হয় তারাও ভাসানচর ঘুরে এসেছেন এবং সেখানে থাকার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে ভাসানচরে নেওয়ার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া যে দীর্ঘায়িত হবে এমন নয়। বরং মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় কিনা তা দেশটির রাজনৈতিক স্ট্যাট্রেজি এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবের ওপর নির্ভর করে। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে চাইলে আজও নিতে পারে, কালও নিতে পারে। কিন্তু ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর