শিরোনাম
রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারে কালক্ষেপণ

তিন বছরে ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বারবার সিদ্ধান্তহীনতায় পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির (কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র) সংস্কারকাজ। দরপত্র-পুনর্দরপত্রেই কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। প্রথম দরপত্র আহ্বানের পর দুই বছরেও শুরু হয়নি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের সংস্কারকাজ। মেরামত না হওয়ায় উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। এতে গত প্রায় তিন বছরে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। একই সঙ্গে কেন্দ্রটির একাধিক ইউনিট চিরতরে অচল হওয়ায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানান, ইউনিট দুটিতে জেনারেটরসহ মালপত্র সরবরাহ কাজের জন্য ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতিতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর প্রায় এক বছর ১১ মাস পর ১০ ডিসেম্বর মেরামত কাজের ক্রয় প্রস্তাব ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। তবে এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের জরুরি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ২০১৮ সালে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ইউনিট দুটি দ্রুত সংস্কার না করলে এর মেরামত ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনকি চিরতরে বসে যেতে পারে ইউনিট দুটি। তখন ক্ষতি হয়ে যাবে হাজার কোটি টাকার। অন্যদিকে ২ নম্বর ইউনিটটি ওভারহোলিংয়ের (পূর্ণাঙ্গ সংস্কার) জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় ইউনিটটি আগামী এপ্রিলের আগে চালুর সম্ভাবনা নেই।

জানা গেছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১৬ থেকে ২২ টাকা। অন্যদিকে সরকারি মালিকানাধীন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৪০ পয়সার কম। অথচ দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন অচল রেখে ৫০ গুণ বেশি দামের বেসরকারি বিদ্যুৎ কিনছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সংস্কারের অভাবে পাঁচটি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটের কম। বর্ষাকালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ উৎপাদনে থাকার কথা থাকলেও তখন উৎপাদন হয়েছে ১৩০ মেগাওয়াটের কম। সংস্কারের অভাবে দুই বছর ১০ মাসে ইউনিট দুটি থেকে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ ইউনিট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে, প্রতি ইউনিট ৪০ পয়সা করে যার উৎপাদন মূল্য ৭ কোটি ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৫ টাকা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিসহ অনেক বেসরকারি কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ২২ টাকা দরে কিনছে। এ দরে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটে কম উৎপাদিত হওয়া বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়ায় ৪০২ কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৬ টাকা। এতে সরকারকে বিদ্যুৎ কেনায় বাড়তি গুনতে হয়েছে (উৎপাদন খরচ বাদে) ৩৯৫ কোটি ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৮১ টাকা। প্রতি মাসে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে ১১ কোটি টাকার বেশি। আর বাড়তি খরচের এ বোঝা শেষ পর্যায়ে গিয়ে চাপছে ভোক্তার কাঁধে। বাড়ছে বিদ্যুৎ বিল। বাড়ছে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি।

এ ব্যাপারে জানতে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র) ব্যবস্থাপক মো. এ টি এম আবদুজ্জাহেরকে ফোন করলে তিনি বলেন, ফাইলটি গত বুধবার অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা ছিল। এর বেশি কিছু জানা নেই। সূত্র জানান, কপিরাইট নিয়মানুসারে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল সরবরাহ ও সংশ্লিষ্ট কাজ করার আইনগত অধিকার শুধু জাপানের তোশিবা এনার্জি সিস্টেম অ্যান্ড সলিউশন করপোরেশন বা তাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠানের। এ জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রথম টেন্ডার ডিপিএম (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) পদ্ধতিতে আহ্বান করা হয়। কিন্তু ল্যান্ডমার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠান আরও কম দামে কাজ করবে বলে প্রস্তাব দেয় ক্রয় কমিটিতে। তাদের কথায় পিডিবি ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফের দরপত্র আহ্বান করে। এ দরপত্রে দরদাতাকে কর্মক্ষেত্র পরিদর্শনের শর্ত দেওয়া হলেও ল্যান্ডমার্ক কোম্পানির মূল প্রতিষ্ঠান মেসার্স এডিসন ইন্ডিয়া ও মেসার্স ভাউওথ চায়না কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন না করে বারবার সময় বাড়ানোর আবেদন করে। তাদের আবেদনে পিডিবি নজিরবিহীনভাবে ছয় দফা সময় বাড়ায়। সর্বশেষ করোনার অজুহাতে আবার সময় বাড়ানোর আবেদন করে তারা। সাতটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও যোগ্যতা না থাকায় ছয় প্রতিষ্ঠানই দরপত্র দাখিল করেনি। শুধু তোশিবা তাদের স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে দরপত্র দাখিল করে এবং পিপিআর অনুযায়ী একক দরপত্র গ্রহণের নিয়ম আছে। আইন অনুযায়ী তোশিবা ছাড়া আর কেউ এ কাজ করতেও পারবে না। তবে অজ্ঞাত কারণে এখনো ঝুলে আছে সংস্কারকাজ।

সর্বশেষ খবর