সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আগের তুলনায় নিরাপত্তাহীন

------ খুশী কবির

আগের তুলনায় নিরাপত্তাহীন

আগের তুলনায় দেশের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় বেশি ভুগছে। আগে সড়কে নারীর যাতায়াত সীমিত ছিল। কিন্তু এখন নারীর যাতায়াত ও চলাফেরা বেড়ে গেছে। শুধু বাড়িতে নয়, নারী গাড়িতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানবাধিকারকর্মী ও নারীনেত্রী খুশী কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যৌন হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী নারীরা হয়রানির শিকার হলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাচ্ছে। এ জন্য ঘটনাগুলো সামনে আসছে। তবে আগের তুলনায় নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় হিংস্রতা বেড়ে গেছে। আগে জমির দ্বন্দ্ব বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে নারীর ওপর হামলা হতো। কিন্তু এখন উচ্ছৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি নিজের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে অনেক বেশি নারীর ওপর ধর্ষণের মতো নির্যাতন চালাচ্ছে। আর এ ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে মাদরাসার শিক্ষক, বখাটে যুবক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ক্যাডাররা। খুশী কবির বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অবশ্যই নারীদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে নারীর যাত্রাকে অগ্রযাত্রার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখব। অনেকগুলো সূচক ও ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আগের চেয়ে এগিয়েছে। নারীদের গড় আয়ু আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দেশের নারীদের গড় আয়ু এখন উন্নত দেশের মতো। নারীদের গড় আয়ু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি। সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নারীর আগের তুলনায় অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী নিজের আয় নিজেই করছে, কারও ওপর নির্ভর করছে না। আবার অপ্রচলিত খাতে বিশাল সংখ্যক নারী কাজ করছে। তারা হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ হিসাবে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা আরও বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, নারীদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক খাত ছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্রে গ্রামে-শহরে তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছে। আগে দিনমজুর নারী ছিল না। কিন্তু এখন দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, কৃষিমজুর নারী আসছে। অর্থাৎ দেশ স্বাধীনের পাঁচ দশকে এসে এসব খাতে নারীর কাজ করার সুযোগ বেড়ে গেছে। এই নারীনেত্রী বলেন, আবার নেতিবাচক দিক হচ্ছে, নারীর মজুরি অনেক কম। কাজের ক্ষেত্রে মধ্য বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নারী বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আশানুরূপ সংখ্যক নারী উচ্চপর্যায়ে কাজ করছে না। দেখা যায় যে পোশাক খাতে কর্মরত নিম্নপর্যায়ের নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু পদ একটু ওপরের হলে, যেমন ফ্লোর ম্যানেজার হিসেবে নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ পদ যখনই একটু ওপরে যায় তখন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, নারীদের ব্যাপারে অনেকগুলো সূচকে আমরা এগিয়ে গেছি। কিন্তু পৃথিবীতে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান চতুর্থ। অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপত্তা না দিতে পেরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কন্যাসন্তানের বিয়ে আগে দিলেই যে সে নিরাপদে থাকবে এমনটি নয়। কিন্তু আমরা এখন দেখছি বিবাহিত এবং সন্তানের মা- সব বয়সী নারীর ওপরই নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আমি বলব অভিভাবকরা নিজের দায়িত্ব আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। খুশী কবির বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা একসময় যখন তুঙ্গে চলে যায় তখন সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নারী সংগঠন, এনজিওকর্মী এবং চিকিৎসক সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করেছে। আইনের প্রয়োগ, এই অপরাধ বন্ধে ব্যবস্থা, ভিকটিমকে সহায়তা করার পাশাপাশি কঠোর আইনের প্রয়োগও করা হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিলেই অ্যাসিড আইন ও নীতিমালা তৈরি করেছিল। নারীর ওপর অন্য সহিংসতা বন্ধে যদি অনুরূপ ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকবে। আর ধর্ষণকারীরা তখন পার পেয়ে যাবে। আর পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে অপরাধীরা অপরাধে আরও উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন, নারীকে এখনো ভোগ্যপণ্য মনে করা হয়। তাকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করার দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তৈরি হয়নি। ছোটবেলা থেকেই নারীকে বোঝানো হয় সে যে বাড়িতে জন্মেছে সেটা তার নয়, বিয়ের পর তাকে অন্যত্র যেতে হবে। শ্বশুরবাড়িতে অন্যদের মন রক্ষা করতে হবে আর তা না হলে সেখানে সে টিকতে পারবে না। অর্থাৎ নারীর নিজের বাড়ি কোনটি সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, প্রতিটি নারীকে বলব, নিজের ওপর দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। তারা কী করতে চায় তা তাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে। সমাজ ও পরিবারের সিদ্ধান্তে নয়, জীবনে একজন নারী কী করতে চায় সে সিদ্ধান্ত নারীর নিজেকেই নিতে হবে। সে যেন পরগাছা হয়ে না থাকে। আর পুরুষদের প্রতি আহ্বান, তারা যেন নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে।

সর্বশেষ খবর