শিরোনাম
শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
জাতিসংঘের প্রতি অবরোধ আরোপের আহ্বান

মিয়ানমারে সেনার গুলিতে নিহত ৮০ ছাড়িয়েছে

নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাজ্য

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর বিক্ষোভ দমনে এ পর্যন্ত ৮০ জনেও বেশি লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবারই নিহত হন ১০ জন। এ অবস্থায় জাতিসংঘকে গণহত্যা বন্ধে ক্ষমতা দখলকারীদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা টমাস অ্যান্ড্রু। পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাজ্য তার দেশের নাগরিকদের মিয়ানমার ত্যাগ করার জন্য বলেছে এবং সে অনুযায়ী নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী গতকালও দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। তারা প্রতিবাদের প্রথা অনুযায়ী তিন আঙুল তুলে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় জমায়েত এবং বিক্ষোভ করে। এ সময় সেনা ও পুলিশ বাহিনী জনতার আশপাশে অবস্থান নিতে থাকে। তবে গুলি বা হত্যার কোনো খবর জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের সময় গুলিতে নিহত হন অন্তত ১০ জন। আহত হন অনেকে। এ দিন মায়াংয়ের মিছিলে থাকা এক যুবক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেট ছুড়ল। তারপর ছুটে এল গুলি। চোখের সামনে মরে গেল আমার এক           বন্ধু।’ এদিকে বুধবার জাতিসংঘ মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা টমাস অ্যান্ড্রু গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ দমাতে কমপক্ষে ৭০ জনকে ‘হত্যা’ করেছে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা। তার মতে বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনীর এ ‘খুন, নির্যাতন ও হয়রানিমূলক কর্মকান্ড’ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। অ্যান্ড্রু জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে বলেছেন, নিহতের অর্ধেকের বেশির বয়স ২৫ বছরের কম। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর ২ হাজারের বেশি মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে এবং প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। তিনি জানান, মিয়ানমার নামের দেশটি খুনি ও অবৈধ শাসক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা বিক্ষোভকারী, চিকিৎসাকর্মী ও পথচারীদের নির্মমভাবে মারধর করেছে- এমন ঘটনার বিস্তৃত ভিডিওচিত্র প্রমাণ হিসেবে রয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রাণঘাতী গুলি বিক্ষোভকারীদের মাথায় আঘাত করেছে এবং সেনা সদস্যরা নিহত প্রতিবাদকারীদের মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগে সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে বহুপক্ষীয় অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অ্যান্ড্রু বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত না হলে অবরোধ বাস্তবিকভাবে কোনো ফল বয়ে আনবে না।’

নাগরিকদের মিয়ানমার ছাড়ার পরামর্শ ব্রিটেনের : গতকাল এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা ব্রিটিশ নাগরিকদের দ্রুত মিয়ানমার ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অত্যন্ত জরুরি কাজ না থাকলে আপনারা ওই দেশ থেকে বেরিয়ে আসুন।’ বিশ্লেষকদের মতে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে বার্মিজ সেনাদের। এ ছাড়া গণবিক্ষোভ সামাল দিতে সম্প্রতি বিদ্রোহী সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’কে জঙ্গিগোষ্ঠীর তালিকা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন সেনা শাসকরা। এর ফলে ওই সংগঠনটির সঙ্গে লড়াই করে আপাতত শক্তি খরচ করতে হবে না মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে। এ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ নাগরিকদের পণবন্দী করার আশঙ্কা বেড়েছে অনেকটাই। তা ছাড়া দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রশাসনের পাল্টা অভিযানে সে দেশে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে লন্ডনের সামনে। তাই আপাতত নিজের নাগরিকদের মিয়ানমার ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর