বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এমপির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, গত শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যেসব সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে

হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তার দায়দায়িত্ব হরতাল আহ্বানকারী হেফাজতে ইসলামকেই নিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসী হামলার সময় স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। তাদের সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলাকালে বিকাল ৩টার পর থেকেই হেফাজতিরা শহরে তান্ডব শুরু করে। তারা রেলস্টেশনে ভাঙচুর করে কন্ট্রোল প্যানেল জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই প্রথম রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টার পর হেফাজতিরা বিনা উসকানিতে শহরে তান্ডবলীলা চালায়। হামলার সময় সদর থানা থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারী ভাইয়েরা আপনারা আমাদের ওপর ঢিল ছুড়বেন না, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’ মাইকে এই ঘোষণা শোনার পর হামলাকারীরা বিপুল উৎসাহে একের পর এক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত কোনো হরতালে রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়নি। কিন্তু এবারই তারা পর্যায়ক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাড়ি, তার শ্বশুরবাড়ি, তার কার্যালয়, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভনের বাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়াও তারা এসিল্যান্ডের কার্যালয়, জেলা পরিষদ, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পৌর মিলনায়তন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামাল খানের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।

এ ছাড়াও হামলাকারীরা বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরের বাসভবন, সরকারি গণগ্রন্থাগার, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, মাতৃসদনে ভাঙচুর করে। এ ছাড়াও তারা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করে।

সংবাদ সম্মেলনে মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, হামলা-তান্ডবের সময় প্রশাসন নীরব ছিল, ফায়ার সার্ভিসের কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রশাসন একটু সক্রিয় হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কম হতো। তিনি বলেন, হামলার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি, পুলিশের আইজিপি, কেবিনেট সেক্রেটারিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী অনেক আমলার সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু কোনো সাহায্য পাইনি। তিনি বলেন, হামলার সময় কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এর আগে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়া তান্ডব এবং নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যদি বিচার হতো তাহলে গত শুক্রবার ও রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলার সাহস তারা পেত না। তিনি বলেন, আমরা যদি দলীয়ভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করতাম তাহলে অনেক রক্তপাত হতো। আমরা রক্তপাত এড়াতে চেয়েছি। তিনি হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রশাসন কেন ভূমিকা নিল না তাদের স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত করার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, সহ-সভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন, মুজিবুর রহমান বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর