শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা

তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন : জান্নাত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা

হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা সেই জান্নাত আরা ঝর্ণা। মামলা নম্বর ৩০। অন্যদিকে মামলা করতে থানায় আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে মেডিকেল টেস্ট-প্রক্রিয়ার পুরোটা সময় ঝর্ণা ছিলেন পুলিশ প্রটেকশনে। এর আগে ছেলে আবদুর রহমানের করা সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝর্ণাকে তার বড় ছেলের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুনুল হক দুই বছর ধরে ওই নারীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন। সবশেষ ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়্যাল রিসোর্টে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এ বিষয়ে তিনি মামলা করেন। মামলা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ইতিমধ্যে মামুনুল হককে অন্য একটি মামলায় ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে, সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের ও হাসপাতালে মেডিকেল টেস্ট শেষে জান্নাত আরা ঝর্ণা গণমাধ্যমের কাছে মামুনুল হকের বিচার দাবি করে বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, আমি রাষ্ট্রের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন তিনি এবং আমাকে বিয়ে করবেন বলে বারবার আশ্বাস দিলেও করেননি। বিয়ে করবেন এ প্রলোভনে ২০১৮ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে নিয়েছেন আর সময় পার করেছেন তবে বিয়ে করেননি। শুধু আমার সঙ্গে এ অন্যায় করেই শেষ হয়নি আমাকে দিনের পর দিন তিনি ব্যবহার করেছেন।’ মামলার এজাহারে ঝর্ণা উল্লেখ করেছেন, ‘আমার সাবেক স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে ২০০৫ সালের দিকে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধুর সম্পর্কের জেরেই বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলাম, সেখানেই প্রবেশ করেন মামুনুল। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন মামুনুল এবং তার পরামর্শেই আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।’

দুই বছর ধরে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ : মামলার লিখিত অভিযোগে ওই নারী জানান, ‘আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্যজীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে কাটছিল। এর মধ্যে আমাদের সংসারে দুই ছেলেসন্তান জন্ম নেয়।’ ঝর্ণা উল্লেখ করেন, ‘স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায় তিনি আমার ওপর কুদৃষ্টি দেন। এতে আমাদের সংসারে বিভেদ তৈরি হয়। তিনি সুকৌশলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে থাকেন। মামুনুল হকের কুপরামর্শে আমাদের দাম্পত্যজীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু ঢাকা আসার পর শুরুতে পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় আমাকে রাখেন এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এর ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোড উত্তর ধানমন্ডি তৃতীয় তলা সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকি এবং তার ঠিক করে দেওয়া একটি বিউটি পারলারে কাজ শিখতে থাকি। তিনি আমার বাসা ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। গত দুই বছর বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির নামে নিয়ে গেলে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে আমি বিয়ের কথা বললে তিনি আমাকে বিয়ে করব, করছি বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। সবশেষ ৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে বিকাল সোয়া ৩টায় সোনারগাঁর রয়্যাল রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেন। ওই সময় জনগণ আমাদের রিসোর্টে আকস্মিক আটক করে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় জনতার রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা রিসোর্ট থেকে আমাদের নিয়ে যান। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরে মামুনুল হক আমাকে আমার ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় আটকে রাখেন। আমার পরিবার, সন্তান ও আত্মীয়স্বজন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। পরে কৌশলে আমার বড় ছেলেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। ২৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। পরে জানতে পারি ২৬ এপ্রিল আমার বাবা কলাবাগান থানায় একটি ডায়েরি করেন।’ ঝর্ণা বলেন, ‘মামুনুল হকের অনুগামীরা আমাদের হুমকি দিয়েছে ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাই পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের পরামর্শ অনুযায়ী আজকে মামলা দায়ের করেছি।’

মেডিকেল টেস্ট : এদিকে গতকাল দুপুরে মামুনুল হকের ?বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার পর জান্নাত আরা ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। আগামী রবিবার এ রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুরে পুলিশ পাহারায় নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান জানান, দুপুরে ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট করানো হয়েছে। আগামী রবিবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর