শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে হাবিব-উন নবী খান সোহেল

দেশকে পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিশূন্য করা হয়েছে

মাহমুদ আজহার

দেশকে পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিশূন্য করা হয়েছে

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেছেন, বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিশূন্য করা হয়েছে। যে দেশে রাজনীতি থাকে, সেদেশের ভবিষ্যৎ বলা যায়। কিন্তু রাজনীতি না থাকলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। রাজনীতি একটি দেশের ফুসফুসের মতো। দেশ আজ প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস নিয়ে আইসিইউতে থাকা করোনা রোগীর মতো। যারা ক্ষমতায় আসার জন্য বা থাকার জন্য দেশের এই অবস্থা তৈরি করেছেন, দেশকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলার ফুটবল বানিয়েছেন, তাদের একদিন খেসারত দিতেই হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন হয়ে গেল। সেখানে একটি স্লোগান উঠল ‘খেলা হবে’। যদিও প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের নানা খেলা মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অনেকটা বিরক্ত হয়েই এই স্লোগানকে সামনে এনেছিলেন। সত্যিই কি রাজনীতি একটি খেলা?  কদিন আগে ফরিদপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতা খেলায় নামার কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জের বিনা ভোটে নির্বাচিত এক এমপিও বেশ কিছুদিন আগে ‘খেলা হবে’ বলেছিলেন। রাজনীতির নামে এলাকায়-এলাকায়, দেশে-দেশে খেলা চলছে।

প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমরা কি এ খেলার বাইরে? না, অবশ্যই না। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার জন্য এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদেরকেও খেলায় নামিয়েছেন। তবে খেলোয়াড় হিসেবে নয়, খেলার ফুটবল হিসেবে। কখনো ভারত, কখনো চীন, কখনো আমেরিকা, কখনো রাশিয়া, কখনো ইইউ, কখনো সৌদি আরব, কখনো ইরান, কখনো ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ কখনো বা ‘কোয়াডএলাইন্স’। আমরা সবার খেলার ফুটবল।  বিএনপির এই তরুণ নেতা বলেন, যে সরকারের জনভিত্তি নেই, অবৈধ, সে শূন্যের ওপর ভেসে থাকে। সব শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য  রক্ষা করে চলে। নইলে ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে হবে। জনগণ একটি রাজনৈতিক দলের শক্তি, সেই জনগণই এখন আওয়ামী লীগের আতঙ্ক। ভোট এলে রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যায়। আর ভোট এলে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে নয়, প্রশাসনের কাছে যায়। জনগণকে ভোটের বাইরে রাখার জন্যই এটা তারা করে। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, সাধারণত যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে চায় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যেন রাজনীতি করার সুযোগ পায়। অন্তত এই কারণে যে, তাকেও একদিন বিরোধী দলে যেতে হতে পারে। অথচ আওয়ামী লীগ অন্য কারও রাজনীতি করার সুযোগই রাখছে না। কেন? হয়তো তারা ভাবছে তারা কোনো দিন বিরোধী দলে যাবে না, আজীবন ক্ষমতায় থাকবে। যিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি হয়তো ভাবছেন, যত দিন পারি ক্ষমতা চালিয়ে নিই। এরপর কার কি হলো, দল থাকল কি থাকল না- তাতে তার কিছুই আসে যায় না। অথবা তিনি পুতুল, তিনি শুধু নাচছেন, সুতা তার হাতে নেই।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, শেখ হাসিনার কোনো দোষ নেই। তার হাতে ক্ষমতা নেই। দেশ চালাচ্ছে অন্যরা।

এসব কথা ধোপে টেকে না। কারণ, যে পথে শেখ হাসিনা হাঁটছেন সেই পথে তিনি জেনে শুনে নিজেই পা বাড়িয়েছেন। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি একত্রে কাজ করেছেন, একসঙ্গে জেল খেটেছেন। অথচ সেই বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জোর করে সাজা দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে জেলে পুরেছেন। এক সময় দেশের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে ‘টু মাইনাস থিওরি’ ছিল। এখন দুই নেত্রীর মধ্যে একজন এখন নিজেই অন্যজনকে মাইনাস করতে চাইছেন। খালেদা জিয়ার মতো জনপ্রিয় নেত্রীকে রাজনীতির অঙ্গনের বাইরে রাখলে  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ এবং রাজনীতি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। তার বিদেশে থাকা এটাই প্রমাণ করে, দেশে রাজনীতি করার পরিবেশ ও সুযোগ নেই।

হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, আগে পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন, প্রেস ক্লাব, রমনা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সর্বত্রই সমাবেশ করা যেত। মহানগরে-শহরে-ওয়ার্ডে-উপজেলায়-ইউনিয়নে সর্বত্রই কর্মিসভা এবং কর্মি সম্মেলন করত রাজনৈতিক দলগুলো। এখন আর হয় না। কারণ, অবৈধ সরকারবিরোধী জনমত তৈরি হতে পারে- এই ভয়ে। পুলিশের অনুমতির ছুতো দিয়ে সব ধরনের মিছিল-সভা-সমাবেশ প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশকে রাজনীতিশূন্য করে কাদের উপকার হয়? এতে আমলাদের এবং বিদেশি ক্রীনড়কদের উপকার হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই স্বৈরতন্ত্রের বাঘের পিঠে চেপে বসেছেন। যেখান থেকে চাইলেই তিনি স্বেচ্ছায় নামতে পারবেন না। তিনি হয়তো ভাবছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এসব হলে জনগণ কিছুটা তার দিকে ঘুরে দাঁড়াবে। এটা সম্পূর্ণই একটা অলীক কল্পনা। কারণ এসব মেগা প্রজেক্টের পেছনের যে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র, তা মানুষের কাছে পরিষ্কার। ভোট নিয়ে এদেশের মানুষের সঙ্গে যে প্রতারণা করা হয়েছে, তা জনগণের আত্মমর্যাদায় দারুণভাবে আঘাত করেছে। জনগণের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, ১০০টি পদ্মা সেতু বানালেও তা সারবে না।

সর্বশেষ খবর